প্রায় দুই দশক ধরে প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার বেঙ্গালুরু (RCB) ১৮তম ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের ফাইনালে প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতেছে। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে শেষ ওভারে নেমে সমাধানকারী রোহিত শর্মা নয়, বরং RCB-এর অধিনায়ক বিরাট কোহলি-ই দলকে সাফল্যের মুখ দেখান। ম্যাচ শেষে স্টেডিয়ামের কোথায় তাকাবেন বুঝে উঠতে না পেয়ে আবেগে ভেঙে পড়েন কোহলি, চোখের কোণে ছুটে আসে উচ্ছ্বসিত আনন্দের অশ্রু।

Source: Ittefaq | 4 June 2025 | Pic: Collected
২০১৮ সাল থেকে প্রতিবার ফাইনালে-দু’শ্বাস ফেলতে হয়েছিল RCB সমর্থকদের—মাঝে ক্রমাগত অধরা থাকত শিরোপার স্বাদ। কিন্তু ২০২৫ সালের ফাইনালে, ফাইনাল বিপক্ষে দাঁড়ালো পাঞ্জাব কিংস, যাদের হারিয়ে খেলা জয় নিশ্চিত করেছে RCB। নির্ধারিত ২০ ওভারে পাঞ্জাবের সংগ্রহ ছিল ১৯০ রান, আর RCB ব্যাটিং শুরু করে সাহসী গতিতে। তবে ম্যাচের উত্তেজনা তখন জানার মতো নয়, যখন শেষ তিন ওভার বাকি থাকল মাত্র ৩০ রান।
তবুও, দলের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের দৃঢ়তা তাকে এনে দেয় পঞ্চম উইকেটে ৮২ রানের জুটি। বিরাট কোহলি নিজে ঝড়ের মত ফর্মে ছিলেন—তার ব্যাট থেকে এসেছে ৬৪ বলে ৭৫ রানের জোরালো ইনিংস। সমর্থক রেকর্ড ভেদ করে প্রতিটি বল স্বল্পতম সময়ে দূরে পাঠালেন তিনি, কিন্তু ঘুরিয়ে দিতে পারলেন না পুরো বেলা। অবশেষে শিমরন হেটমায়ার এবং কোহলির সমন্বয়ে আসলো জয়ী চার—শেষ ওভার নেমেই মাত্র ১২ রানে ৩ উইকেট নিলেন যুজবেন্দ্র চাহাল, আর ম্যাচ জয় RCB-র অনুকূলে মোড়ালো। ittefaq.com.bd
ফাইনাল শেষে উত্তেজনায় আপ্লুত স্টেডিয়াম, আর তার মধ্যে কোহলির আবেগপূর্ণ আবির্ভাব সকলের চোখ ভিজিয়ে দিয়েছিল। ২০০৭ সালে RCB প্রতিষ্ঠার পর বহু বারের প্লেয়-অফ হলেও কখনো শিরোপা অনুপস্থিত ছিল বেঙ্গালুরুর ট Trophy কেবিনে। ১৮ বছর ধরে দেখেছে উত্থান-পতন, অবসরের সিদ্ধান্ত, সমালোচনা—কিন্তু এখন সেই অপেক্ষা ঘুচেছে।
আইপিএল শুধু ভারতের ভেতরেরই নয়, সমগ্র উপমহাদেশীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য উৎসবের মতো। বাংলাদেশে RCB সমর্থকদের মধ্যে করোনার পর আবারও উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। ঢাকার খিলক্ষেত ঘাটে এবং চট্টগ্রামের নিউ টাইগার স্টেডিয়ামে অনেকে বড় পর্দায় ফাইনাল ম্যাচ দেখেছেন বলে জানা গেছে। বাংলাদেশি ক্রিকেটপ্রেমীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাগ করেছে কোহলির আবেগঘন মুহূর্তের ছবি—“বিরাটের জীবনে যেন ঘুরপাক খেয়ে ফিরে এল সেই পুরানো স্বপ্নের ছোঁয়া”।
সর্বশেষ Ittefaq-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, RCB সমর্থনকারী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বহু পরিবার দুপুর থেকেই বাড়িতে এবং ক্যাফেতে জমেছে; “আমরা একসঙ্গে গাইলাম ‘কিংস ইজ ব্যাক’ গানের লাইন, আর চোখে তখন অশ্রু, কারণ শেষ পর্যন্ত কোহলি-রাও আলিঙ্গনে ঘুরে দাঁড়ালেন,” বললেন ঢাকার এক তরুণ RCB ভক্ত।
ফাইনালের পর ভাইরাল হওয়া কোহলির বক্তব্যে উঠে এসেছে “এই শিরোপা শুধু জেতা নয়, ১৮ বছরের আত্মত্যাগের মূল্য।” তিনি বলেন, “ওই ছোট্ট ছেলে, যিনি ২০০৭ সালে RCB জার্সি পড়ে চ্যাম্পিয়ন হতে স্বপ্ন দেখত, আজ সে স্বপ্ন-দিন পালন করল।” কোহলি আত্মবিশ্বাসী হয়ে যোগ করেন, “আগামী মৌসুমেও এই ট্রফি ধরে রাখাই চ্যালেঞ্জ, কারণ প্রতিটি দল উন্নয়নশীল, তাই আমাদের প্রতিদিনই আরও ভালো হতে হবে।”
যা-ই বলেন, IPL MVP হওয়া এক পালিশিত লেজেন্ডের আবেগ—তার কণ্ঠের দোলা, চিৎকার, অশ্রু, সবই সৌন্দর্য তৈরি করেছে ক্রিকেটের ঐতিহ্যবাহী এই মঞ্চে। কোহলি নিশ্চিত করেছেন, “ক্যারিয়ারের এই সোনালি অধ্যায় আমি কখনই ভাবিনি ছেড়ে দেব। আসল কাজ এখন শুরু।”
RCB-র এই শিরোপা জয় শুধু একটি দলগত সাফল্য নয়, বরং ক্রিকেটের শিক্ষা, দৃঢ়সংকল্প, এবং দীর্ঘমেয়াদি ধৈর্যের প্রতীক। ১৮ বছর ধরে অপেক্ষার পর বিরাট কোহলি যেমন আবেগের বন্যায় ভেঙে পড়ল, তেমনি হাজারো সমর্থকও আনন্দে ভেসেছে। আইপিএল ২০২৫-এ শিরোপার স্বাদ পাওয়ার আনন্দ RCB কে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে—এটাই মনে করছেন কোহলির কোটি ভক্ত।
আজ থেকেই RCB-র ঘরের কোণায় সেই স্বপ্নের ট্রফি জায়গা পেল, আর তরুণ খেলোয়াড়েরা দেখল—কখনো হাল ছেড়ে চলে গেলে বড় জয়ের স্বপ্ন ম্লান হতে পারে। কোহলির চোখের জল যেন বার্তা দিল, “একটি স্বপ্ন যদি সত্যিই মনের সাথে বসবাস করে, তবে একদিন অবশ্যই তা বাস্তবে রূপ পায়।”