পশ্চিম গোলার্ধের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান, জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদের নিচে গোপনভাবে চালানো হচ্ছে খনন কাজ, যা ইসলামী ঐতিহাসিক নিদর্শন মুছে ফেলার উদ্দেশ্যে পরিচালিত বলে অভিযোগ করেছে ফিলিস্তিনের জেরুজালেম গভর্নরেট। সম্প্রতি ‘আনাদুলো’ এজেন্সির প্রতিবেদন মতে, “ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়—হনন ও ধ্বংসের কাজ অবৈধভাবে করা হচ্ছে, যা উমায়্যাদ যুগের ইসলামি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ধ্বংস করে দিচ্ছে, এবং এটি কাঠামোগত ক্ষতি ছাড়িয়ে ঐতিহাসিক সত্য স্পর্শ করছে” । গভর্নরেট বলেছে, এই গোপন খননের উদ্দেশ্য হলো ‘টেম্পল মাউন্ট’ নামক ইহুদি বিবরণে ভীতু সমর্থন তৈরি করা, যাতে আল-আকসার ইসলামি পরিচয় মুছে ফেলা যায় । এই অভিযানগুলো সম্পূর্ণ “ব্যাপক বৈশ্বিক নজরদারির বাইরে” পরিচালিত হচ্ছে, ফলে এটি মসজিদটির ভিত্তি ও ইতিহাসের ওপর “গভীর হুমকি” হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে ।

1 September 2025 | Pic: Collected
নিউ আরাবের রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত ৯ মাসে শুরু হওয়া একটি গোপন সুড়ঙ্গ, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৫৫০ মিটার, আল-আকসার পশ্চিম থেকে শুরু হয়ে ইসলামি, কানানীয় ও রোমান প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাগুলোর ওপর দিয়ে গিয়েছে, যা যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে এটি ঐতিহাসিক সম্পদ নষ্ট করার চরম দৃষ্টান্ত হবে । আল-আকসা ট্রাস্টি কাউন্সিলের সদস্য ফাখরি আবু দীয়াব জানিয়েছেন, কেবলমাত্র ইসরায়েলি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কর্মীরা এই কাজে অংশগ্রহণ করার অনুমতি পাচ্ছেন এবং স্থানীয়দের প্রবেশক্ষেত্র সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রাখা হয়েছে ।
জেমাল আমরো নামের একটি প্রত্নতত্ত্বজ্ঞ বলছেন, ইসরায়েল গত 60 বছরের বেশি সময় ধরে এই এলাকার নিচে টানেল খনন করছে। বিশেষ করে গত ১৫ বছর ধরে তারা মসজিদের ভিত্তিতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, যা “বাস্তব হুমকি” সৃষ্টি করেছে। তিনি আশঙ্কা করছেন, খননের ফলে ভবনের ফাঁকফোকর এবং তার মেঝের ওপরের কাঠামোতে “চোখে দেখা যায় এমন ফাটল” দেখা দিয়েছে ।
এ অবস্থায় UNESCO, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে জেরুজালেম গভর্নরেটের আহ্বান—“এই ঐতিহাসিক লঙ্ঘন বন্ধ করতে এবং মসজিদের পরিচয় রক্ষায় দ্রুত হস্তক্ষেপ করা হোক” । UNESCO-র ২০০৭ সালের একটি প্রস্তাবে ইতিমধ্যে এমন ধরণের অবৈধ কাজ বন্ধ করার আবেদন করা হয়েছে, যা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি ।
অতীতে Western Wall Tunnel-এর মতো গণপ্রসিদ্ধ খনন এবং Solomon’s Stables / Al-Marwani Mosque-এর নিড়ের জায়গায় খনন ইত্যাদি ঘটলেও, সেগুলো ছিল নিয়ন্ত্রিত এবং বিজ্ঞাপ্ত ছিল, যেখানে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ ছিল । কিন্তু চলমান গোপন খনন সম্পূর্ণ ভিন্ন—এটি আন্তর্জাতিক সংবিধান ও সংরক্ষণ নীতি লঙ্ঘন করে, এবং আল-আকসার নিরাপত্তা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায় গুরুতর চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
শেষমেশ, এটি শুধু একটি খননের ঘটনা নয়; এটি ধর্মীয়, ঐতিহাসিক এবং মানবিক এজেন্ডা নিয়ে সংঘটিত একটি সাংস্কৃতিক লড়াই। জেরুজালেম গভর্নরেট বলছে—“আল-আкসা মসজিদ ও তার নিচের ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না, তা আমাদের স্মৃতি ও ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।” বিশ্বের উচিত হলোদ্য তৎপরতা চালিয়ে এগুলোকে রক্ষা করা যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এ ঐতিহ্য থেকে বঞ্চিত না হয়।