back to top

পাকিস্তানে মনসুন বন্যায় বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল, নিহত ২২০, ক্ষতিগ্রস্ত লাখো মানুষ

পাকিস্তানে চলমান মৌসুমি বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে, দেশজুড়ে এখন পর্যন্ত অন্তত ২২০ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ। মৌসুমি বর্ষার অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত এবং পাহাড়ি ঢলের কারণে উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ সিন্ধু প্রদেশ পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে, ভেঙে পড়েছে সেতু ও রাস্তাঘাট, ভেসে গেছে ঘরবাড়ি, ধ্বংস হয়েছে ফসলের জমি ও অবকাঠামো। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী কয়েকদিনে আরও ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে।

16 August 2025 | Pic: Collected


বিপর্যস্ত এলাকা থেকে লাখো মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হলেও বহু মানুষ এখনো আটকা পড়ে আছেন দুর্গম গ্রামাঞ্চলে, যেখানে উদ্ধারকারী দল পৌঁছাতে হিমশিম খাচ্ছে। সেনাবাহিনী ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে, তবে সীমিত সম্পদ ও প্রবল স্রোতের কারণে অনেক এলাকায় পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। ইতিমধ্যে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো পাকিস্তানের সঙ্গে সমন্বয় করে জরুরি সহায়তা পাঠানো শুরু করেছে, কারণ গবাদি পশু মারা যাওয়ায় এবং পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন পাকিস্তানের মৌসুমি বৃষ্টিপাতকে আরও অনিশ্চিত ও তীব্র করে তুলছে, যার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে কৃষক ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনে। পাকিস্তান সরকার ইতিমধ্যেই জরুরি অবস্থা জারি করেছে এবং ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী কয়েক বিলিয়ন ডলারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী জনগণকে সহমর্মিতা দেখাতে এবং বিপর্যস্তদের পাশে দাঁড়াতে আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যদিকে আবহাওয়াবিদরা সতর্ক করেছেন, বৃষ্টি থেমে না গেলে নদ-নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পাবে এবং নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হতে পারে। বিশেষ করে সিন্ধু নদ অববাহিকার গ্রামীণ অঞ্চলগুলোতে ভয়াবহ বন্যার ঝুঁকি বাড়ছে। অতীতের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, এ ধরনের পরিস্থিতি কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে, যার ফলে পুনর্বাসন প্রক্রিয়াও দীর্ঘ হবে।
বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ দুর্বল হওয়ায় এবং অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা আরও বেড়ে গেছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। পাকিস্তানের ইতিহাসে এর আগেও ২০১০ ও ২০২২ সালে ভয়াবহ বন্যায় লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল, আর এবারও সেই দুঃসহ স্মৃতিই যেন ফিরে আসছে। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন স্থানের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে মানুষ ছাদে আশ্রয় নিয়েছে, শিশুরা ডুবে যাওয়া গ্রামে ভেসে বেড়াচ্ছে এবং বয়স্করা সাহায্যের জন্য আহাজারি করছে। পাকিস্তান সরকার ও আন্তর্জাতিক মহলের দ্রুত সমন্বিত পদক্ষেপ ছাড়া এই দুর্যোগ আরও বড় মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

- Advertisement -spot_img

Related News

- Advertisement -spot_img
Explore More
- Advertisement -spot_img