শंघাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের (SCO) সাম্প্রতিক বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন মাত্রায় স্থাপন করার বার্তা দিয়েছেন। শি জিনপিং স্পষ্টভাবে বলেছেন, ভারত ও চীন প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বরং সহযোগী হওয়া উচিত এবং সীমান্তের সমস্যার কারণে দুই দেশের দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক ক্ষুণ্ণ হতে দেয়া যাবে না। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, সীমান্ত বিরোধ থাকলেও তা দ্বিপক্ষীয় অংশীদারিত্ব ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে বাধা দিতে পারবে না। মোদি এ বিষয়কে সমর্থন করে বলেছেন, দুই দেশকে “কুঠিন ফল নয়, বরং উন্নয়নের সঙ্গী” হিসেবে দেখতে হবে।
31 August 2025 | Pic: Collected
তিনি আরও বলেন, ভারত চীনের সঙ্গে সম্পর্ককে বিশ্বশান্তি এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার অংশ হিসেবে এগিয়ে নিতে চায়। এই সংলাপে সীমান্ত আলোচনার পাশাপাশি ভিসা সুবিধা, ফ্লাইট পুনঃচালনা এবং বাণিজ্যিক সহযোগিতার বিষয়েও অগ্রগতি আনা হচ্ছে। শি জিনপিং এক উদাহরণ দিয়েছেন ‘ড্রাগন ও হাতি একসঙ্গে’—চীন ও ভারতের প্রতীক হিসেবে—তাদের যেন একসঙ্গে অগ্রসর হতে পারে এবং একে অপরকে শত্রু নয়, বরং সম্ভাবনার অংশ হিসেবে গ্রহণ করে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। এছাড়া শি মোদিকে একটি গোপন চিঠি পাঠিয়েছেন, যাতে বোঝানো হয়েছে যে, চীনের স্বার্থ ক্ষুণ্ণকারী কোনো তৃতীয় দেশের পদক্ষেপ সম্পর্ককে প্রভাবিত করবে না। এই বার্তা স্পষ্ট করে যে দুই দেশই নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রেখে কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন বজায় রাখতে চায়। বৈঠক চলাকালীন সীমান্তে শান্তি ফিরিয়ে আনা, নতুন চুক্তি এবং কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে অগ্রগতি দেখানো হয়েছে।
ভারত সবসময় সতর্ক কূটনৈতিক মনোভাব অবলম্বন করছে, বিশেষ করে চীনের পাকিস্তান সহযোগিতা এবং তিব্বতের জলসম্পদ নিয়ে উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে। মোদির বক্তব্য অনুযায়ী, ভারত-চীন সম্পর্ক যেন কোনো তৃতীয় পক্ষের প্রভাবের শিকার না হয়। SCO প্ল্যাটফর্মে দুই নেতা নিজেদের নীতি ও অভিমত স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করেছেন, যা দেখিয়েছে যে “শান্তি নয়, উন্নয়নে বিশ্বাস এবং সীমান্ত নয়, উন্নয়নের পথ” হলো তাদের মূল লক্ষ্য। এ ধরনের কূটনৈতিক সংলাপ দুই দেশের মধ্যে অস্থিরতার সময়ে স্থিতিশীলতা এবং বিশ্বশান্তির জন্য দিকনির্দেশনার কাজ করছে। এছাড়া বৈঠকে শি ও মোদি দু’জনেই জানিয়েছেন, সীমান্ত বিষয়ে যেকোনো সমস্যাকে উভয়পক্ষের সংলাপ এবং সমঝোতার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে, যাতে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক শান্তি বজায় থাকে। তারা আরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, বাণিজ্যিক ও প্রযুক্তি সহযোগিতার সুযোগ বাড়ানো হবে, যার ফলে দুই দেশের জনগণের জীবনমান উন্নত হবে। শি জিনপিংয়ের বার্তা স্পষ্ট করে যে ভারত-চীন সম্পর্ককে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতার খাতায় না লিখে, বরং পারস্পরিক উন্নয়ন ও সহযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে নিতে হবে। মোদি এই দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করে জানিয়েছেন, দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক শুধুমাত্র সীমান্ত বিষয় নয়, বরং বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার অংশ।
SCO সম্মেলনের পর এই সংলাপ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া পেয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শি-মোদির এই বৈঠক ভবিষ্যতে ভারত-চীন সম্পর্ককে স্থিতিশীল ও অংশীদারিত্বের দিকে এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই দেশের নেতৃত্বের এই সংকেত বিশ্বকে জানাচ্ছে যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, পারস্পরিক সহযোগিতা এবং কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনই সমাধানের মূল। SCO-র মঞ্চে এই সংলাপ ভারতের জন্য একটি কৌশলগত সফলতা, যেখানে সীমান্ত সমস্যা ও আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। শেষ পর্যন্ত, শি-মোদির এই বার্তা দেখাচ্ছে যে ভারত-চীন সম্পর্ক একটি সমন্বিত, স্থিতিশীল এবং উদ্ভাবনী অংশীদারিত্বের দিকে এগোচ্ছে, যা শুধু দুই দেশ নয়, পুরো অঞ্চলের জন্যও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।