back to top

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনির পাল্টা বার্তা: মার্কিন পরমাণু চুক্তি প্রস্তাব মেনে নেব না

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষ থেকে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি আলোচনা শুরু করার আহ্বান জানানো হয়েছিল। তবে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি সেই প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তার বক্তব্য, “গুন্ডামি করে বেড়ানো শক্তিগুলো আসলে নিজেদের ইচ্ছা চাপিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে আলোচনা করতে চায়, সমস্যার সমাধান নয়।

Source: Ittefaq | 4 June 2025 | Pic: Collected


ট্রাম্প ঘোষিত চিঠি অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের কাছে পরমাণু অস্ত্র গ্রহণ থেকে বিরত রাখার জন্য একটি নতুন চুক্তি সংক্রান্ত আলোচনায় বসতে চেয়েছিল। এই চিঠিতে বলা হয়েছিল, মূলত দুই পথ আছে—একটি সামরিক অভিযানের মাধ্যমে বাধ্য করা এবং দ্বিতীয়টি কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা গড়ে তোলা। তবে খামেনি মন্তব্য করেন, “যখন আমরা জানি, তারা (যুক্তরাষ্ট্র) সম্মান করবে না, তখন আলোচনার কোনো মানে থাকে না।” তার দৃষ্টিতে, আলোচনার আড়ালে পররাষ্ট্র নীতিতে আরোপিত নতুন প্রত্যাশা এবং চাপ সজ্জিত। এটি ইরানের সার্বভৌম অধিকারে আঘাত হানার অংশ হিসেবেই তিনি বর্ণনা করেন।

২০১৫ সালে ‘পারস্পরিক আস্থা ও নিরীক্ষণ’ (JCPOA) নামে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল ইরান। তাতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে পারমাণবিক কর্মসূচি সীমাবদ্ধ করার বিনিময়ে তেহরান আন্তর্জাতিক আণবিক তদারকিকে স্বাগত জানিয়েছিল। কিন্তু ২০১৮ সালে ট্রাম্প একতরফাভাবে JCPOA থেকে সরে এসে কঠোর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। তার পরবর্তী বছরগুলোতে, ইরান সীমিত করা উঠে যাওয়া সুবিধা পুনরুদ্ধার করতে চেয়ে বেশি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে শুরু করে—ইঞ্জিনিয়ার হয় ৬০ শতাংশ পর্যন্ত, যা প্রায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পর্যায়ে পৌঁছানোর ইঙ্গিত বহন করে। এ প্রসঙ্গে খামেনি প্রশ্ন তুলে ধরেন, “আপনারা কেন বলছেন, ইরান পারমাণবিক প্রতিশ্রুতি পালন করেনি? তাহলে আপনি কি আপনার প্রতিশ্রুতি পালন করেছেন?”

খামেনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, “ইরান যুদ্ধ চায় না, তবে কেউ যদি ভুল করে হামলা চালায়, তাতে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।” তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে সতর্ক করে বলেন, “যদি আপনি বৈধ আলোচনার নামে চাপাণি দিতে চান, আমরা প্রতিক্রিয়ায় সক্ষম এবং ফলাফল আপনার স্বার্থে হানিকর হবে।” দু’পক্ষের টক্কর যেন নতুন করে বিশ্বমঞ্চে উত্তেজনা তৈরি করবে—এভাবেই দেখা দিচ্ছে পারমাণবিক ইস্যুর নাটক।

খামেনির এই অবস্থান শুধু যুক্তরাষ্ট্র–ইরান দ্বিপাক্ষিক নয়, বরং একটি আঞ্চলিক সংকটের প্রেক্ষাপটও বহন করে। মধ্যপ্রাচ্যের পক্ষে দৃষ্টান্ত হিসেবে ওঠে যে, “যখন কোনও নির্যাতনকারী শক্তি আলোচনা প্রস্তাব করে, তারা আসলে ক্ষমতা প্রয়োগের অন্যায় কৌশল প্রয়োগ করতে চায়।” বিশ্বে ‘পারমাণবিক অস্ত্রবিহীন পারমাণবিক সম্ভাবনা’ তৈরির লক্ষ্যে ইরান নিজস্ব কৌশল সাজিয়ে নিচ্ছে—এতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণ যেমন বেড়ে গেছে, তেমনি কূটনৈতিক খেলা আরও জটিল হয়েছে।

খামেনি সূত্রে জানা যায়, ইরান আলোচনায় বসবে না যতক্ষণ না বাস্তবতায় যুক্তরাষ্ট্র পুরনো প্রতিশ্রুতি পালন করছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত হবে বর্বর হুমকির বদলে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সঙ্গে কূটনৈতিক আয়োজনে যুক্ত থাকা, যাতে সমস্যা সেনাশক্তি নয়, সমঝোতার মাধ্যমে সমাধানযোগ্য হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে—বিশ্বব্যাপী মার্কিন–ইরান সম্পর্ক কীভাবে এগোবে? পরমাণু চুক্তির সেই অচলাবস্থা সৃজন করে নতুন কোন এপিসোড সৃষ্টি করবে, নাকি শান্তিপূর্ণ আলোচনায় সন্ধান মিলবে?


ডোনাল্ড ট্রাম্পের চিঠি প্রত্যাখ্যান করে আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, “ইরান তাদের সার্বভৌম অধিকারের প্রশ্নে কোনো প্রলোভনে নতি স্বীকার করবে না।” এই প্রত্যাখ্যান শুধু কূটনৈতিক উত্তেজনা নয়, বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গণে ইরানের অবস্থার প্রতিফলন। সামরিক হুমকির ভয়ে হয়নি, বরং নিজেদের ওপর আরোপিত শর্তে জবাব দেওয়া হবে—এমন বিশ্বাসই রয়েছেতেখরান ভিত্তিক এই বক্তব্যে। পরমাণু ইস্যুতে নতুন করে উত্তেজনা বা শান্তির দিগন্ত—এখন সময়ই বলে দেবে।

- Advertisement -spot_img
Related News
- Advertisement -spot_img
Explore More
- Advertisement -spot_img