ইরানে ইসরায়েলের বিস্ফোরক হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় জরুরি জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক আহ্বান করেছেন।

Source: bdnews24 | 13 June 2025 | Pic: Collected
ট্রাম্প প্রশাসন গত কয়েক মাস ধরেই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু এই সময়ে ইসরায়েল এমন হামলা চালানোয় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্র, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির ফ্যাক্টরি এবং সামরিক ঘাঁটিগুলোর ওপর নিশানাভিত্তিক হামলা চালিয়েছে।
তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এই হামলার লক্ষ্য ছিল তেহরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখা। ইসরায়েলি বাহিনী জানিয়েছে, এই অভিযান দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে এবং এটি মাত্র শুরু।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এই হামলায় জড়িত নয় বলে জানানো হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও স্পষ্ট করে বলেন, “ইরানের বিরুদ্ধে হামলায় যুক্তরাষ্ট্র নেই। আমাদের একমাত্র অগ্রাধিকার হচ্ছে ওই অঞ্চলে আমেরিকান নাগরিক ও বাহিনীর সুরক্ষা।”
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়ায় আরও জানানো হয়েছে, ইসরায়েলের জেরুজালেমে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি দ্রুত পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে পারে—এমন সতর্কবার্তাও দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে পশ্চিম তীর ও ইসরায়েলে মার্কিন সরকারি কর্মীদের ভ্রমণে নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপের কথাও ভাবা হচ্ছে।
জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন বলেন, “ইরানে হামলার সিদ্ধান্ত ছিল সম্পূর্ণভাবে ইসরায়েলের নিজস্ব ব্যাপার। ওয়াশিংটনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ থাকলেও তারা এতে অংশ নেয়নি।” যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা নিয়ে গুঞ্জন উঠলেও ড্যানন বলেন, “এখন কোনো জল্পনার প্রয়োজন নেই।”
এই হামলার প্রেক্ষিতে রোববার ওমানে অনুষ্ঠিতব্য ইরান-যুক্তরাষ্ট্র ষষ্ঠ দফার আলোচনা এখন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। ওই আলোচনায় ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সীমিত করার বিষয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর আশা করা হচ্ছিল।
এর আগে বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মন্তব্য করেছিলেন, “ইসরায়েল ইরানে হামলা করতে পারে।” তবে তিনি সেসময়ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে মত দেন। রয়টার্সকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এক মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা জানান, মধ্যপ্রাচ্যে সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী। এতে মার্কিন নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার বিকল্প ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি এখন শুধু একটি দ্বিপাক্ষিক সঙ্ঘর্ষ নয়—বরং বিশ্ব রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি করেছে। প্রশ্ন উঠেছে—এই উত্তেজনার অবসান হবে আলোচনার মাধ্যমে, নাকি এটি আরও বড় পরিসরের সংঘাতে রূপ নেবে?