ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষিতে ইরান হরমুজ প্রণালী বন্ধের ইঙ্গিত দিয়েছে, যা বিশ্ব জ্বালানি বাজারে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি করেছে। ইরানের পার্লামেন্টের রক্ষণশীল সদস্য ও সাবেক রেভল্যুশনারি গার্ড জেনারেল এসমাইল কোসারি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন—এই প্রণালী বন্ধের বিষয়টি এখন আর কেবল হুমকি নয়, বরং “গুরুতরভাবে বিবেচিত” হচ্ছে। টাইমস অব ইরান এবং আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোর বরাতে জানা গেছে, যদি ইসরায়েল যুদ্ধের আগ্রাসন বাড়ায় বা গাজায় হামলা অব্যাহত রাখে, তাহলে ইরান এ অঞ্চলে তাদের সামরিক উপস্থিতি আরও বাড়িয়ে হরমুজের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পথে অগ্রসর হবে।

Source: Jugantor | 15 June 2025 | Pic: Collected
বিশ্বের প্রায় এক তৃতীয়াংশ তেল এবং তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের (LNG) পরিবহন এই প্রণালীর ওপর নির্ভরশীল। প্রতিদিন প্রায় ২০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল হরমুজ প্রণালী দিয়ে পরিবাহিত হয়। ফলে এটি বন্ধ হয়ে গেলে বৈশ্বিক অর্থনীতি ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানির দাম ১২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। যদিও সাময়িক কিছুটা পতন ঘটেছে, তবে বাজারে দোলাচল রয়ে গেছে। পশ্চিমা বিশ্ব এবং জ্বালানি আমদানিকারী দেশগুলো ইরানের এই ঘোষণায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। যুক্তরাজ্য, গ্রিসসহ ইউরোপীয় দেশগুলো তাদের বাণিজ্যিক জাহাজগুলোকে হরমুজ ও লোহিত সাগর এড়িয়ে চলার নির্দেশ দিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে, কেবল জ্বালানি নয়, অন্যান্য আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক পণ্যের ওপরও এর প্রভাব পড়বে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মুদ্রাস্ফীতি আরও বাড়বে, এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান সরাসরি ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। বিশেষত বাংলাদেশে জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন ও আমদানিকৃত ভোগ্যপণ্যের ওপর মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়বে তীব্রভাবে।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি নিরাপত্তা এখন চরম হুমকির মুখে। ইরানের এই ঘোষণা যুদ্ধের আরেকটি ইঙ্গিত কিনা তা নিয়ে চলছে জল্পনা। তবে এ মুহূর্তে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক চাপ ও আলোচনার মাধ্যমে সংকট মোকাবেলার জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে এক টেবিলে বসার আহ্বান জানিয়েছেন শান্তিপ্রিয় মহল। ইরান হরমুজ বন্ধ করলে শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, বরং পুরো পৃথিবীই জ্বালানি সংকটে নাকাল হবে। সুতরাং, এখনই প্রয়োজন দ্রুত, কার্যকর এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের উদ্যোগ।