গাজার খান ইউনিসে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিজের ৯ সন্তানকে হারানো ফিলিস্তিনি চিকিৎসক ডা. হামদি আল-নাজ্জার একই হামলায় আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। গত ২৪ মে ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলায় তার বাড়ি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়, যেখানে তার ১০ সন্তানের মধ্যে ৯ জন নিহত হয়। একমাত্র জীবিত সন্তান, ১১ বছর বয়সী আদম, গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

Source: Ittefaq | 2 June 2025 | Pic: Collected
ডা. হামদি আল-নাজ্জারের স্ত্রী, ডা. আলা আল-নাজ্জার, নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সে শিশু বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। হামলার সময় তিনি হাসপাতালে ডিউটিতে ছিলেন এবং পরে নিজের ৯ সন্তানের দগ্ধ মরদেহ গ্রহণ করেন। এই মর্মান্তিক ঘটনায় গাজা এবং আন্তর্জাতিক মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মুনির আল-বারশ এক্সে দেওয়া পোস্টে বলেন, “একটি সম্পূর্ণ পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে; কেবল শোকাহত মা এবং তার আহত সন্তান ছাড়া।” তিনি আরও জানান, ডা. হামদি আল-নাজ্জার গুরুতর আহত অবস্থায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন ছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেন।
এই হামলার পর ইতালি সরকার আদমকে চিকিৎসার জন্য দেশে নেওয়ার প্রস্তাব দেয় এবং তার মা-বাবাকেও আশ্রয় দেওয়ার প্রস্তুতি নেয়। তবে ডা. হামদি আল-নাজ্জারের শারীরিক অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে স্থানান্তর করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে আদমের চিকিৎসা চলছে এবং তার মা, ডা. আলা, হাসপাতালে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ছেলের পাশে রয়েছেন।
এই ঘটনা গাজায় চলমান মানবিক সংকটের প্রতীক হয়ে উঠেছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ৫৪,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। গাজায় খাদ্য, পানি ও চিকিৎসাসেবা সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের হামলা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল এবং এর জন্য দায়ীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
ডা. হামদি আল-নাজ্জারের মৃত্যু এবং তার পরিবারের এই মর্মান্তিক ট্র্যাজেডি গাজায় চলমান সংঘর্ষের ভয়াবহতা ও মানবিক বিপর্যয়ের একটি করুণ উদাহরণ। এই ঘটনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি জাগরণী ডাক, যা অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা স্মরণ করিয়ে দেয়।