রাজনৈতিক বিতর্ক ও নির্বাসনের কঠিন বাস্তবতা পেরিয়ে এবার ঈদ-উল-আযহা ঘিরে এক আবেগঘন পারিবারিক পুনর্মিলনের সাক্ষী হল দিল্লি। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সজীব ওয়াজেদ জয় মায়ের হাতে রান্না করা মোরগ পোলাও খেতে ঈদের আগেই ভারতের রাজধানীতে পাড়ি দেন। বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দীর্ঘদিন পর এই সাক্ষাৎ ছিল একদিকে আবেগে ভরা, অন্যদিকে দেশ-বিদেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

Source: Ittefaq | 11 June 2025 | Pic: Collected
শেখ হাসিনা বর্তমানে নয়াদিল্লির একটি সেফ হাউসে অবস্থান করছেন। গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের মুখে তিনি দেশত্যাগ করে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। সেই থেকে একঘরে জীবনযাপন করছেন এই প্রবীণ নেত্রী। এমন পরিস্থিতিতে তার একমাত্র পুত্রের আকস্মিক আগমন মায়ের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।
গোপন সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে, ভার্জিনিয়া থেকে বিশেষ বিমানে করে ১৪ জুন রাতে দিল্লি পৌঁছান জয়। সঙ্গে ছিলেন একজন ঘনিষ্ঠ সঙ্গী। নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল নিশ্ছিদ্র। মায়ের সামনে এসে দাঁড়ানো মাত্রই অশ্রু ঝরিয়ে তাঁকে জড়িয়ে ধরেন জয়। এমন দৃশ্য মা-ছেলের সম্পর্কের গভীরতা আরও একবার প্রমাণ করে দেয়।
ঈদের দিন সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই রান্নাঘরে নেমে পড়েন ছেলের প্রিয় খাবার মোরগ পোলাও রান্না করতে। রাজনৈতিক ভারে অভ্যস্ত এই নারী যখন হাঁড়ি-খুন্তি নিয়ে ব্যস্ত, তখন যেন মাতৃত্বের অনন্য রূপ সামনে আসে। দুপুরে খাবার টেবিলে জয়কে নিজের হাতে পরিবেশন করেন তিনি। খাবারের তালিকায় ছিল তার প্রিয় মোরগ পোলাও, মাছ, ডাল ও সবজি। মা-ছেলে একসঙ্গে খাবার ভাগ করে খেয়েছেন। হাসিনার একান্ত চাওয়ায় ‘রান’ (লেগ পিস) তুলে দেন ছেলের পাতে। জয়ের আবেগঘন জবাব, “আর না… আর পারব না, প্লিজ়!” — মুহূর্তটি হয়ে ওঠে স্মরণীয়।
জয়ের এই সফর ও মা-ছেলের মিলন নিয়ে এখনো ভারত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি। তবে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ সফর শুধু পারিবারিক আবেগ নয়, বরং ভবিষ্যতের রাজনীতির জন্যও একটি বার্তা হতে পারে। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ও জয়ের পদক্ষেপ নিয়ে নানা জল্পনা তৈরি হচ্ছে।
বর্তমানে জয় কোনও প্রকাশ্য কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন না এবং তার সফরসূচি গোপন রাখা হয়েছে। তবুও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তার এই সফর ভবিষ্যতের কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সমীকরণে প্রভাব ফেলতে পারে।
শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের এই ঈদ পুনর্মিলন শুধু একটি পারিবারিক ঘটনা নয়, বরং রাজনীতির কোলাহলে হারিয়ে যাওয়া সম্পর্ক, ভালোবাসা ও মমতার এক অনন্য চিত্র। ক্ষমতা হারানো, নির্বাসনের কষ্ট কিংবা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার ভিড়ে মা-ছেলের এই মিলন দেখিয়ে দেয়—পরিবারই জীবনের আসল আশ্রয়।