ইউ ভিসা আবেদন থেকে কাজের অনুমতি পর্যন্ত কত সময় লাগে

Date:

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন ভিসার মধ্যে ইউ ভিসা (U Visa) একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভিসা, যা মূলত সহিংস অপরাধের শিকার এবং সেই অপরাধ তদন্ত বা বিচারে সহযোগিতা করা বিদেশিদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য চালু করা হয়েছে। এই ভিসা পাওয়া গেলে একজন অভিবাসী শুধু যুক্তরাষ্ট্রে থাকার বৈধ অধিকারই পান না, পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময় পর তিনি স্থায়ীভাবে বসবাসেরও (গ্রিন কার্ড) সুযোগ পান। তবে ইউ ভিসার সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো—আবেদনের পর কতদিনের মধ্যে একজন আবেদনকারী ওয়ার্ক পারমিট বা কাজের অনুমতি পান। বাস্তবে দেখা যায়, ইউ ভিসার আবেদনে প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে দীর্ঘ সময় লেগে যায় এবং আবেদনকারীরা প্রায়ই অনিশ্চয়তার মধ্যে ভোগেন।

31 August 2025 | Pic: Collected


মার্কিন নাগরিকত্ব ও অভিবাসন সেবা (USCIS)-এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ইউ ভিসার আবেদন জমা দেওয়ার পরপরই ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া যায় না। প্রথমে আবেদনকারীর কেস প্রাথমিকভাবে গৃহীত বা বোনাফাইড ডিটারমিনেশন (BFD) পর্যায়ে যেতে হয়। এই ধাপটি সম্পন্ন হলে আবেদনকারীকে সাময়িকভাবে ডিফার্ড অ্যাকশন এবং কাজের অনুমতি দেওয়া হয়। অতীতে ইউ ভিসার আবেদনকারীদের চার-পাঁচ বছর পর্যন্তও অপেক্ষা করতে হতো, তবে সাম্প্রতিক সময়ে USCIS প্রক্রিয়া সহজ করতে নতুন নিয়ম চালু করেছে। এখন বোনাফাইড ডিটারমিনেশন পর্যায়ে পৌঁছাতে সাধারণত প্রায় ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লেগে যায়, এবং এই সময় শেষে আবেদনকারী ওয়ার্ক পারমিট (EAD – Employment Authorization Document) পান।

অন্যদিকে, ইউ ভিসার চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে এখনও দীর্ঘ সময় লেগে যায়। USCIS-এর হিসাব অনুযায়ী, সম্পূর্ণ ভিসা প্রক্রিয়া শেষ হতে ৫ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এর অন্যতম কারণ হলো, প্রতি বছর ইউ ভিসার জন্য সর্বোচ্চ ১০,০০০ জনকে গ্রিন কার্ড দেওয়ার সীমা রয়েছে। এই সীমাবদ্ধতার কারণে অপেক্ষমাণ তালিকায় হাজারো আবেদন জমে থাকে। ফলে আবেদনকারীরা কাজের অনুমতি পেলেও পূর্ণাঙ্গ ভিসা অনুমোদনের জন্য তাদের বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়।

তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অভিবাসী অধিকারকর্মীরা বারবার যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে আবেদন করেছেন, যাতে ইউ ভিসার প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা যায় এবং ভুক্তভোগীরা দীর্ঘ অনিশ্চয়তার মধ্যে না থাকেন। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, যারা সহিংস অপরাধের শিকার হয়ে ন্যায়বিচারের স্বার্থে কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করছেন, তাদের জন্য ন্যূনতম নিরাপত্তা ও আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। কাজের অনুমতি ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব, তাই ওয়ার্ক পারমিট প্রদানের গতি বাড়ানো অপরিহার্য।

এছাড়া, ইউ ভিসাধারীরা নির্দিষ্ট কিছু সুবিধা ভোগ করতে পারেন। এর মধ্যে রয়েছে—স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষার সুযোগ, এবং নির্দিষ্ট কিছু সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা। আবেদনকারী যদি ওয়ার্ক পারমিট পান, তবে তিনি আইনগতভাবে যেকোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে পারবেন। তাছাড়া, ইউ ভিসাধারী তার নিকট আত্মীয়দের (স্বামী/স্ত্রী, সন্তান) জন্যও ডেরিভেটিভ ভিসা আবেদন করতে পারেন।

সব মিলিয়ে, ইউ ভিসা শুধু একটি অভিবাসন নীতি নয়, বরং এটি সহিংস অপরাধের শিকারদের জন্য আশার আলো হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও এর প্রক্রিয়া জটিল এবং দীর্ঘমেয়াদি, তবুও ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার সুযোগ ভুক্তভোগীদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান প্রশাসনের হাতে যদি প্রক্রিয়াটি আরও সহজ করা যায়, তবে হাজার হাজার ভুক্তভোগী দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন।

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Share post:

Subscribe

spot_imgspot_img

Popular

More like this
Related

নেপালে বিক্ষোভের আগুনে মৃত সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী—রাজ্যলক্ষ্মী চিত্রকারের নির্মম পরিণতি

নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে জেন জি বিক্ষোভ...

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আবিদুর চৌধুরী উন্মোচন করলেন নতুন iPhone Air

Apple-এর সাম্প্রতিক “Awe Dropping” iPhone 17 সিরিজের উন্মোচন অনুষ্ঠানে...

বেআইনি নির্মাণের অভিযোগে GHMC নোটিশ পেলেন আল্লু অর্জুন

দক্ষিণ ভারতের জনপ্রিয় সুপারস্টার ও জাতীয় পুরস্কার জয়ী অভিনেতা...

নেপালে ব্যাপক বিক্ষোভের পর সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে সার্বিক নিরাপত্তা

নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধের প্রতিবাদে দেশব্যাপী সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায়...