নিউ ইয়র্কের লং আইল্যান্ডে ঘটে গেল এক ভয়াবহ ও হৃদয়বিদারক ঘটনা, যা পুরো এলাকার মানুষকে নাড়িয়ে দিয়েছে। ৩৩ বছর বয়সী জেমস রোজানো, যিনি দীর্ঘদিন ধরে নেশাজাতীয় দ্রব্যের কারণে মানসিকভাবে অস্থির হয়ে উঠেছিলেন, শেষ পর্যন্ত নিজের জীবনকেই এক অদ্ভুত বিদায় বার্তার মধ্য দিয়ে শেষ করে দিলেন। ঘটনার দিন সকালে তার মা পুলিশের সাহায্য চান, কারণ ছেলেটি বাড়ির ভেতরে অস্বাভাবিক আচরণ করছিল এবং তিনি আশঙ্কা করেছিলেন যে যেকোনো সময় বড় কিছু ঘটতে পারে। তখনই রোজানো পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশে বলে ওঠেন—“আমাকে চুমু দাও, আমি বাইরে যাচ্ছি পুলিশের হাতে মরতে।”

4 September 2025 | Pic: Collected
এই কথা শোনার পরই পরিবারের ভেতর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দুপুরের দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। রোজানো তখন হঠাৎ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন হাতে একটি বন্দুক সদৃশ অস্ত্র নিয়ে। পুলিশ বারবার তাকে অস্ত্র নামাতে অনুরোধ করে এবং আত্মসমর্পণ করতে বলে। কিন্তু তিনি সে নির্দেশ মানেননি, বরং অস্ত্রটি পুলিশের দিকে তাক করেন। বাধ্য হয়ে পুলিশ গুলি চালায়, যা সরাসরি তার বুকে লাগে। দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হলেও তাকে আর বাঁচানো যায়নি। পরে জানা যায়, তার হাতে থাকা অস্ত্রটি আসল বন্দুক নয় বরং একটি বিবি গান (BB Gun), যা দেখতে একেবারে আসল শটগানের মতো।
কিন্তু সেই মুহূর্তে পুলিশের জন্য আসল আর নকল বোঝা সম্ভব হয়নি, ফলে ট্র্যাজেডি অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রোজানো আগে থেকেই নানা ধরনের আইনি জটিলতায় জড়িত ছিলেন, এমনকি অতীতে প্রেমিকার ওপর হামলার অভিযোগে গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন। তার এই মৃত্যু শুধু পরিবারের নয়, পুরো এলাকার মানুষের জন্য এক কঠিন শিক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে যে মাদক ও মানসিক সংকট কীভাবে জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটিকেও কেড়ে নিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে আবারও প্রমাণ হলো যে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও নেশা নিরাময়ের সঠিক সুযোগ না থাকলে একজন মানুষ ধীরে ধীরে নিজের জীবন ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
পুলিশের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, তারা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করেছিলেন রোজানোকে থামাতে, কিন্তু অস্ত্র নামাতে অস্বীকৃতি এবং আচরণে হুমকির সুর থাকায় আর কোনো উপায় ছিল না। এখন এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চলছে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সচেতন থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ঘটনায় একদিকে যেমন পুলিশের পদক্ষেপ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, অন্যদিকে মাদকাসক্তি ও মানসিক স্বাস্থ্য সংকট নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, পরিবারের সদস্যরা যদি আগেই চিকিৎসা বা পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতেন তাহলে হয়তো এমন পরিণতি আসত না। তবে যাই হোক না কেন, রোজানোর শেষ কথা—“আমি পুলিশের হাতে মরতে যাচ্ছি”— হয়ে রইল এক বেদনাদায়ক দৃষ্টান্ত, যা সমাজকে সতর্ক করছে এবং একই সঙ্গে শোকের সাগরে ভাসিয়ে দিচ্ছে তার পরিবারকে।