সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে হুন্দাই-এলজি যৌথ উদ্যোগের একটি ব্যাটারি প্ল্যান্টে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও শুল্ক অনুসন্ধান সংস্থা (ICE) পরিচালিত অভিযান থেকে গ্রেফতার হওয়া প্রায় ৩০০ জন দক্ষিণ কোরিয়ান শ্রমিক মুক্তি পেতে চলেছেন, এমন ঘোষণা এসেছে দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের পক্ষ থেকে। প্রেসিডেন্টের প্রধান সহকারী কাং হুন-সিক জানান, দুই দেশের মধ্যে তড়িঘড়ি আলোচনার পর এ বিষয়ে বিন্দুমাত্র ঘাটতি আর নেই; কেবল প্রশাসনিক কাজ শেষ হলেই চার্টার ফ্লাইটের মাধ্যমে তাদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।
7 September 2025 | Pic: Collected
অভিযানটি হয়েছিল জর্জিয়ার স্যাভানা শহর সংলগ্ন এলাবেল গ্রামে, যেখানে হুন্দাই ও এলজি ইনর্জি সলিউশনের $৪.৩ বিলিয়ন বিনিয়োগের অন্যতম বৃহত্তম প্রোজেক্ট চলছে। সেখানে বুধবার থেকে অভিযান শুরু হয়, এবং শেষ পর্যন্ত ৪৭৫ জন কর্মী আটক করা হয়—এর অধিকাংশই দক্ষিণ কোরিয়ান নাগরিক।
অভিযান চলাকালে ICE যে হেলিকপ্টার, বর্ডার গার্ড যানসহ ব্যাপক র পরিসরের ব্যবস্থা নিয়েছিল, তা রিপোস্টার তোলেও ব্যতিক্রম হয়নি। সূত্র অনুযায়ী, কিছু গ্রেফতারকৃত কর্মী বাতাসের ডাক্টে লুকিয়ে, কেউ পুকুরে ঝাঁপিয়ে আত্মরক্ষা করার চেষ্টাও করে। প্রেস ভিডিওতে দেখা যায়, হাত ও পায়ে হাতকড়া বেঁধে বাসে তোলা হচ্ছে তাদের।
এই অভিযান ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতির সবচেয়ে বড় এক-পয়েন্ট অভিযান বলে দাবিও করা হয়েছে, কারণ এটি একসাইটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্ববৃহৎ নির্বাহী পদক্ষেপ ছিল। এতে বলা হয়, অনেক সময় ‘ওয়ান-শটে’ ব্যবসা এবং কর্মীদের উপর বিনা-নোটিশে এমন নজিরবিহীন অভিযান চালানো হয়—যা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এবং বাণিজ্যকে সংকটে ফেলছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিক্রিয়া ছিল স্পষ্ট: অভিযোগের পাশাপাশি ঘোষণা করা হয়—“আমাদের নাগরিকদের অধিকার রক্ষা করা হবে”, এমন আশ্বাস দিয়েছে প্রেসিডেন্ট, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধান সচিব। তারা তড়িঘড়ি একটি ডিপ্লোম্যাটিক টাস্কফোর্স গঠন করেন, এবং ইউএস দূতাবাসের মাধ্যমে অভিযোগ তুলে ওয়াশিংটনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
তাছাড়া, ICE–এর ভিডিও ফাঁস করাও উদ্দীপক হয়। যাতে শ্রমিকদের হাতে ও পায়ে শেকল দেখা যায়। দক্ষিণ কোরিয়ার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পার্ক ইউন-জু ভিডিও প্রকাশকে ‘অনুতাপজনক’ বলে অভিহিত করেন—বিশেষ করে যখন এখনই দুই দেশের মধ্যে শীর্ষ নেতাদের মিটিং হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বক্তব্য অনুযায়ী, কেউ চাকরি ছাড়াসাংবাদিকের অনুমতি ছাড়াই কাজ করছিল, কেউ ভিসা মেয়াদ অতিক্রান্ত হয়ে কাজ করছিল; তাকে তো ধরা হবেই তাৎক্ষণিকভাবে। যদিও গ্রেফতারকৃতদের কারো বিরুদ্ধে এখনো কোনো ফৌজদারী মামলা দায়ের করা হয়নি ।
এই ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ কোরিয়া সম্পর্কের একটি সংবেদনশীল পর্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা চলমান $৩৫০ বিলিয়ন বিনিয়োগ ও বাণিজ্য আলোচনায় এটি নতুন ধরনের প্রতিবন্ধকতা যোগ করেছে।
অন্যদিকে LG Energy Solution তাদের কর্মকর্তাদের পরিস্থিতি মোকাবিলায় জর্জিয়ায় পাঠায়, তাদের বাংলাদেশী ও অন্যান্য শ্রমিকদের সহায়তার উদ্যোগ নেয়। একইসঙ্গে হুন্দাই নিজের পক্ষ থেকে জানিয়েছে, “গ্রেফতারকৃতদের কেউই সরাসরি হুন্দাইয়ের কর্মী নয়,” এবং সরবরাহ চেইন পর্যবেক্ষণ করবে তারা।
এই হামলার ঘটনা শুধু অভিবাসন আইন প্রয়োগের কঠোরতা নয়, বরং একটি বৃহত্তর কোণ দিয়ে দেখা দরকার—যেখানে বাণিজ্য, শ্রম অধিকার, কনস্ট্রাকশন সাইটে বৈধতা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সব একসঙ্গে বিঁধে আছে। এখন প্রয়োজন গুরুতর কূটনৈতিক সমাধান এবং শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ। দ্রুত চার্টার ফ্লাইট ও তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনই হতে পারে একটি ইতিবাচক সূচনার দিক।