বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান প্রায় এক বছর ধরে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের সংসদ সদস্য হওয়ার ফলে জনরোষের শঙ্কায় দেশে ফেরেননি তিনি। এই পরিস্থিতির কারণে তার নামে একাধিক মামলা হয়েছে, যার মধ্যে একটি হত্যার মামলা অন্তর্ভুক্ত। এসব কারণে সাকিব এখনও দেশে ফিরতে পারেননি এবং দেশের মাঠেও তার খেলাধুলা থেমে গেছে।
4 September 2025 | Pic: Collected
সাকিব দেশে না ফেরায় তার জাতীয় দলের ক্যারিয়ারও থমকে গেছে। যদিও সরকার পরিবর্তনের পর তিনি দুটো সিরিজে খেলেছেন, তবে এরপর আর তাকে বাংলাদেশের জার্সিতে দেখা যায়নি। এ অবস্থায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তামিম ইকবাল যদি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচনে বিজয়ী হন, তাহলে সাকিব কি দেশে ফিরে জাতীয় দলে খেলতে পারবেন কি না।
সম্প্রতি এক পডকাস্টে তামিম ইকবাল বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “সে একজন অ্যাকটিভ ক্রিকেটার। সে বাংলাদেশের ক্রিকেটার। এখন সে যদি ফিট থাকে, অনুশীলন করতে পারে এবং নির্বাচকরা যদি তাকে দলে রাখার যোগ্য মনে করেন, অবশ্যই সে যোগ্য। তাহলে সে জাতীয় দলের জন্য আবারও নির্বাচিত হবে। তাকে দেশে ফেরানোটা আমার হাতে নেই। এখানে আইনি বিষয় জড়িয়ে আছে।”
তামিম আরও বলেন, “দেশের পরিস্থিতি তো আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। তার বিরুদ্ধে মামলা আছে, সে যদি সেগুলোর মুখোমুখি হতে পারে এবং জাতীয় দলের অনুশীলন করতে পারে, নিঃসন্দেহে তার জন্য দরজা খোলা থাকবে। সে আমেরিকান ক্রিকেটার নয়, পর্তুগিজ ক্রিকেটার নয়, সে বাংলাদেশের।”
এছাড়া তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, কোর্টে মামলা পরিচালনা বা মামলা তুলে নেওয়া বিসিবির দায়িত্ব নয়। “সাকিবকে দেশের হয়ে খেলতে হলে আগে দেশে ফিরতে হবে, অনুশীলন করতে হবে। এটাই হলো সত্যি কথা। আমি কোনো কিছু লুকাচ্ছি না। এটা সাকিবেরও দেশ, ক্যারিয়ারটাও তার, সুতরাং এসব সে করবে কি না সেটা তার সিদ্ধান্ত। এটা আমি বলে দিতে পারি না।”
সাকিবের দেশে না ফেরার ফলে জাতীয় দলের জন্য তার অনুপস্থিতি অনেকটা অনুভূত হয়েছে। বিসিবি ও নির্বাচকরা বলছেন, সাকিব যদি দেশে ফিরে আসে এবং ফিটনেস ও অনুশীলনের মাধ্যমে প্রস্তুতি নেয়, তবে তিনি আবারও জাতীয় দলে ফিরতে পারবেন। তবে এর জন্য তার আইনি জটিলতা সমাধান করা এবং দেশে নিয়মিত অনুশীলন করা অপরিহার্য।
সাকিবের ফিটনেস এবং তার অনুশীলনের প্রস্তুতি নির্ধারণ করবে তার জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা। তামিম ইকবাল মনে করেন, সাকিব একজন প্রতিভাবান এবং অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। তার উপস্থিতি জাতীয় দলে নতুন উদ্দীপনা এবং শক্তি যোগ করতে পারে। তবে সঠিক নিয়ম, আইন এবং ফিটনেস বজায় রাখার শর্তে তার জাতীয় দলে ফেরার পথ খোলা।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, সাকিবের জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তন কেবল তার পারফরম্যান্সের বিষয় নয়, বরং ক্রিকেট বোর্ড ও আইনি প্রক্রিয়ার সঙ্গেও সম্পর্কিত। তার দেশে ফিরে আসা এবং আইনি বিষয়গুলোর মুখোমুখি হওয়া জাতীয় দলের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এছাড়া অনুশীলনের মাধ্যমে তার ফর্ম ফিরিয়ে আনা এবং দেশের ক্রিকেটের সঙ্গে সংযুক্ত থাকা তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তামিমের মন্তব্য থেকে স্পষ্ট, জাতীয় দলে ফিরতে হলে সাকিবের জন্য মূলত তিনটি শর্ত পূরণ করা জরুরি:
- দেশে ফিরে আসা এবং আইনি জটিলতা মোকাবিলা করা।
- ফিটনেস ও অনুশীলনের মাধ্যমে প্রস্তুতি নেওয়া।
- নির্বাচকরা তাকে যোগ্য মনে করলে জাতীয় দলে অংশগ্রহণ করা।
সাকিবের দেশীয় ক্রিকেটে ফিরে আসা জাতীয় দলের জন্যও ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তার অভিজ্ঞতা, নেতৃত্ব এবং খেলোয়াড়ি মান জাতীয় দলের তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সাকিবের উপস্থিতি এবং প্রতিযোগিতামূলক খেলোয়াড়ি দক্ষতা জাতীয় দলের জন্য অতিরিক্ত শক্তি যোগ করবে।
সব মিলিয়ে, সাকিব আল হাসানের জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তন নির্ভর করছে তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, আইনি বিষয় এবং নির্বাচকদের মূল্যায়নের উপর। দেশের মাঠে ফেরার সুযোগ থাকলেও তার জন্য সঠিক সময়, প্রস্তুতি এবং আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা অপরিহার্য। তামিম ইকবালের মন্তব্যে স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে, জাতীয় দলের দরজা খোলা আছে, কিন্তু সাকিবকে নিজেই সেই পথে এগোতে হবে।
সাকিবের জাতীয় দলে ফেরার সম্ভাবনা এবং দেশের ক্রিকেটের সঙ্গে পুনঃসংযুক্ত হওয়ার এই প্রক্রিয়া বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় দল ও সমর্থকরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন এই প্রতিভাবান অলরাউন্ডারের প্রত্যাবর্তনের।