যুক্তরাজ্যের সাবেক সিটি মিনিস্টার ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক, যিনি বাংলাদেশে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত, সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে একটি ব্যক্তিগত চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে তিনি তাঁর আসন্ন লন্ডন সফরকালে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ দূরীকরণের কথাও উল্লেখ করেছেন । টিউলিপ লিখেছেন—
“প্রিয় অধ্যাপক ইউনূস, লন্ডনে আপনার সফর উপলক্ষে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও স্বাগত জানাই। একজন ব্রিটিশ-বাংলাদেশি হিসাবে, আমি বিকেল চা বা মধ্যাহ্নভোজের মাধ্যমে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিজ্ঞতা জানতে চাই। দুর্নীতি সংক্রান্ত কিছু অভিযোগ—বিশেষত দুদকের সাথে—যা ‘ভুল বোঝাবুঝি’ সৃষ্টি করেছে, তা দূর করতে এই সাক্ষাৎ সহায়ক হবে।”
Source: Ittefaq | 8 June 2025 | Pic: Collected
চিঠিতে টিউলিপ আরও উল্লেখ করেন, ইউনূসের মতো একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তির সঙ্গে কথা তুলে তিনি নির্বাচনী এলাকার জনগণের মনোবল বজায় রাখতে চান। তিনি অভিযোগ করেন—দুদক তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকার একটি ঠিকানায় এলোমেলো চিঠি পাঠাচ্ছে, অথচ তার আইনজীবীদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই ।
এই চিঠি পাঠানোর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট অবশ্য দ্বিমুখী—টিউলিপ ও তার মায়ের বিরুদ্ধে ৭২০০ বর্গফুট জমি গ্রহনের অভিযোগ দায়ের করে দুদক তদন্ত শুরু করেছে। তারা অভিযোগ অস্বীকার করে ও ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ হিসেবে তৎক্ষণাত প্রতিক্রিয়া দিয়েছে । টিউলিপের আইনজীবীরা বর্ণনা দিয়েছে, তাদের লন্ডন থেকে যোগাযোগ চেষ্টা বৈধ ছিল, কিন্তু দুদক সেই আবেদন উপেক্ষা করে ঢাকার একটি অজানা ঠিকানায় চিঠি পাঠিয়েছে, যা জনমনে বিভ্রাট বাড়িয়ে দিয়েছে ।
চিঠিতে টিউলিপ এই মর্মেও জানিয়েছেন—দুজনের পারস্পরিক আস্থায় যদি খোলাখুলিভাবে আলোচনা হয়, তবে ঢাকা-লন্ডন দুই দিকেই এই ‘ভুল বোঝাবুঝির’ গন্ধ মিলিয়ে দেওয়া সম্ভব।
“আমি ভেবেছিলাম এটি ভুল বোঝাবুঝি, আর তাই আপনার অভিজ্ঞতা এবং পরামর্শ এই ব্যাঘাত দূর করতে সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করবে।”
আশ্চর্য হলেও সত্য, এই সব ধর্মঘটের মধ্যেও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, ওরা কোনো চিঠি পাওয়েনি । তিনি যোগ করেন, ৫ জুনের পর থেকে তারা ছুটিতে ছিলেন; তাই টিউলিপের চিঠি পৌঁছানোর আগে কিছু হয়তো অনুপস্থিত থাকতে পারে।
এ প্রসঙ্গে দুটি সম্ভাব্য প্রেক্ষাপট উঠে এসেছে—এক, এটি হতে পারে দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগে কোনো ভুল; অথবা দুই, এটি রাজনীতির সূক্ষ্ম কৌশল, যেখানে ‘পাবলিক ইঙ্গেজমেন্ট’ নামের আড়ালে চাপ তৈরি করা হচ্ছে। টিউলিপ বলেন, “আমি যুক্তরাজ্যের নাগরিক, লন্ডনে জন্মেছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি—তবে আমার কোনো লাভের উদ্দেশ্য নেই। আমি শুধু বিশ্বাসঘাতকতা ও বিভ্রাট থেকে মুক্ত সুনির্দিষ্ট পরিচয় ফিরিয়ে আনতে চাই।”
এই প্রস্তাবিত সাক্ষাৎ লন্ডনের সময়সূচির ঘণ্টা গড়ে: ইউনূস ৯–১৪ জুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও রাজা তিন নম্বরের সঙ্গে সম্ভাব্য বৈঠক করবেন। টিউলিপ আশা করছেন—এই আলোচ্যসূচির কোন একদিক হতে তিনি একযোগে আলোচনায় যোগ দিতে পারবেন, যাতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আর বাংলাদেশে স্থানীয় প্রতিক্রিয়ার সমন্বয় ঘটানো যায় ।
ব্যাপক আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে, এটি এসেছে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংযোগের এক চরম উদাহরণ হিসেবে—লন্ডনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নেতাদের মধ্যকার সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক কূটনীতিপ্রভার এবং মাঠের ঘটনা—সব কিছুই একসাথে গেঁথে ওঠার একটা চিত্র। তবে প্রশ্ন এখন—ইউনূস কি এই চিঠির বিষয়ে অবগত? তিনি কি এটি আলোচনার প্ল্যাটফর্মে তুলবেন? এবং সর্বোপরি, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের দাবি আদৌ সত্যি, নাকি এটি একটি কৌশলী ইঙ্গিত মাত্র?