ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির পেছনে কার ভূমিকা ছিল—তা নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে দিল্লি ও ওয়াশিংটনের মধ্যে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি দাবি করেছেন, তারই মধ্যস্থতায় এই দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী দেশের মধ্যে যুদ্ধ এড়ানো গেছে। তবে ভারতের পক্ষ থেকে এসব দাবিকে বারবার ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

Source: BBC Bangla | 20 June 2025 | Pic: Collected
ট্রাম্পের দাবি ও মোদীর আপত্তি
গত ১০ মে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসে। তার পর থেকেই একাধিকবার ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনিই এই সংঘাত থামিয়েছেন। মোদীর সঙ্গে ফোনালাপের পরদিনই তিনি বলেন, “আমি একটা যুদ্ধ থামিয়ে দিলাম… আমি পাকিস্তানকে ভালোবাসি, মোদী অসাধারণ মানুষ।”
তবে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি এক বিবৃতিতে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে স্পষ্টভাবে জানান যে, এই পুরো ঘটনায় কখনোই যুক্তরাষ্ট্র কোনো মধ্যস্থতা করেনি।” তিনি আরও জানান, মোদী ও ট্রাম্প মূলত ‘অপারেশন সিন্দুর’, ইরান-ইসরায়েল সংঘাত এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েই আলোচনা করেছেন।
আসিম মুনিরের হোয়াইট হাউজ সফর নিয়ে উদ্বেগ
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে হোয়াইট হাউজে আমন্ত্রণ ও তার সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দীর্ঘ সাক্ষাৎ ভারতীয় কূটনীতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ওই বৈঠকের আগেই ট্রাম্প বলেছিলেন, “ভারত ও পাকিস্তান সেদিকেই এগোচ্ছিল (যুদ্ধ), আমি থামালাম।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, সেনাপ্রধানকে আমন্ত্রণ জানানো, ট্রাম্পের কৃতিত্ব দাবি ও ভারতের তা খারিজ—সব মিলিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে।
বিশ্লেষকরা কী বলছেন?
মাইকেল কুগেলম্যান (উইলসন সেন্টার): “ট্রাম্পের মন্তব্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে। একদিকে মোদী বলছেন, কোনো মধ্যস্থতা হয়নি, আর ট্রাম্প বলছেন—আমি যুদ্ধ থামিয়েছি। এই বিতর্ক ভারতের জন্য অস্বস্তিকর।”
রাজীব ডোগরা (সাবেক কূটনীতিক): “প্রতিটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে প্রতিক্রিয়া দেখানো কৌশলগত ভুল হতে পারে। মোদী সরকার সঠিকভাবেই অবস্থান পরিষ্কার করেছে, এটা এখানেই শেষ করা উচিত।”
উপমন্যু বসু (মানব রচনা ইনস্টিটিউট): “পাকিস্তানকে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় গুরুত্ব দিতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। ভূ-রাজনীতিতে চীনের উপস্থিতির কারণে এমনটা হতে পারে। তবে ট্রাম্পের মন্তব্য কূটনৈতিক নয়, বরং ‘শো’ টাইপ—তাতে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক বড় ধাক্কা খাবে না।”
ভবিষ্যতের ইঙ্গিত
যদিও ভারত এই ইস্যুতে পরিষ্কার বার্তা দিয়েছে, তবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে কিছু নীতি ও কৌশলে ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে। একদিকে ঘনিষ্ঠ বাণিজ্য চুক্তির আলাপ, অন্যদিকে পাকিস্তান ঘনিষ্ঠ সেনা কর্মকর্তার হোয়াইট হাউজ সফর—সব মিলিয়ে ওয়াশিংটনের ভূমিকায় দ্বৈততা স্পষ্ট।
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই বিরোধী বক্তব্য ও ব্যাখ্যার মধ্যে থেকেও ভারত-মার্কিন সম্পর্ক চূড়ান্ত পর্যায়ে চিড় ধরবে না।