বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নাটকীয় মোড় নিতে পারে লন্ডনে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকের মাধ্যমে। শুক্রবার (১৩ জুন), স্থানীয় সময় দুপুর ২টায় ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনের পার্ক লেনের এক অভিজাত হোটেলে মুখোমুখি হন বাংলাদেশের আলোচিত দুই ব্যক্তিত্ব—নির্বাচনী অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে আলোচনায় থাকা নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলা এই বৈঠক শেষে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে হাস্যোজ্জ্বল মুখে হোটেল ত্যাগ করেন তারেক রহমান। দৃশ্যটি যেমন রাজনৈতিক মহলে কৌতূহল জাগিয়েছে, তেমনি ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সমীকরণের জোরালো ইঙ্গিতও দিচ্ছে।

Source: channel24bd | 13 June 2025 | Pic: Collected
ড. ইউনূস বর্তমানে একটি সম্ভাব্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন। ঠিক সেই মুহূর্তে বিএনপির শীর্ষ নেতার সঙ্গে তার বৈঠক নানা বার্তা বহন করে। বৈঠকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি, নির্বাচনের সময়সূচি ও “জুলাই চার্টার” ইস্যু।
এই বৈঠক শুধুই সৌজন্য সাক্ষাৎ নয়, বরং এটি ভবিষ্যতের ক্ষমতার ভারসাম্য নির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ড. ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বৈঠকের আগেই জানান, “এটি কোনো নির্দিষ্ট ফরম্যাটের বৈঠক নয়। তারেক রহমান বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দলের নেতা, তাই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনাটা গুরুত্বপূর্ণ।”
তারেক রহমানের হোটেল থেকে বের হওয়ার দৃশ্য ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। গণমাধ্যমের ক্যামেরায় ধরা পড়ে, তিনি বেশ আত্মবিশ্বাসী ও ইতিবাচক মুডে ছিলেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি হতে পারে আসন্ন রাজনৈতিক সমঝোতার একটা ইঙ্গিত।
বৈঠকের আনুষ্ঠানিক বিবরণ না মিললেও, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছেন, বৈঠক নিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়া হবে। এটা স্পষ্ট, বৈঠকটি ছিল কৌশলগত, যার প্রভাব পড়বে সামনের দিনগুলোতে।
বিএনপি অতীতেও ড. ইউনূসের অবস্থানকে সমর্থন জানিয়েছে, বিশেষ করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রশ্নে। আর ড. ইউনূস বারবারই নির্দলীয় ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কথা বলে আসছেন। দুই পক্ষের এই অভিন্ন মতলব কি আগামী জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে একটি ঐক্যমতের পথে নিয়ে যেতে পারে?
লন্ডনের এই বৈঠক যেন অনেক না বলা কথার একটি দৃশ্যপট। তারেক রহমানের হাসিমুখ যেমন একটি ইতিবাচক বার্তা দেয়, তেমনি এ বৈঠকের অন্তর্নিহিত বার্তাগুলো ভবিষ্যতের রাজনীতির জন্য হতে পারে একটি ‘গেইমচেঞ্জার’ মুহূর্ত।
এখন সবার চোখ বিএনপির বিবৃতির দিকে। কী বলবেন আমীর খসরু? কী বোঝা যাবে বৈঠকের প্রকৃত ফলাফল? আর ড. ইউনূসের ভূমিকা কতটা কার্যকর হবে রাজনৈতিক সমাধানে? এসব প্রশ্নের উত্তর দেবে আগামী দিন।