back to top

তেল-মূল্য কমলেও আশঙ্কার ছায়া গভীর, মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনায় বিশ্বজুড়ে ধোঁয়াশা

বিশ্ববাজারে তেলের দাম বৃহস্পতিবার সামান্য কমেছে—কিন্তু আতঙ্ক কমেনি। মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক উত্তেজনা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সম্পর্ক ঘিরে অস্থিরতা, বাজারে বাড়তি চাপ তৈরি করেছিল। এখন আলোচনার সম্ভাবনা কিছুটা স্বস্তি দিলেও, বিশ্লেষকরা বলছেন, “এটা ঝড়ের আগে শান্তি।

Source: Reuters | 12 June 2025 | Pic: Collected


Brent crude বৃহস্পতিবার ২২ সেন্ট কমে প্রতি ব্যারেল $82.38-এ নেমেছে, আর West Texas Intermediate (WTI) ২৫ সেন্ট কমে দাঁড়িয়েছে $78.24-এ। একদিন আগেই এই দাম ৪% বেড়ে গিয়েছিল, যখন মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা ও ইরানের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায় বাজার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল।

তবে এখন কিছুটা স্থিতিশীলতা দেখা গেলেও, বাজার পর্যবেক্ষকরা একে বলছেন “সাময়িক বিশ্রাম”—বৃহত্তর অস্থিরতার পূর্বাভাস থাকছেই।

ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা: আলোচনার ইঙ্গিত নাকি কৌশলগত প্যাঁচ?

মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত মার্কিন কর্মীদের সুরক্ষার জন্যই কিছু অংশ প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি, ওমানে আসন্ন একটি গোপন বৈঠকে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা আলোচনায় বসতে পারে এমন ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে।

এই সম্ভাবনাই বাজারে কিছুটা শান্তির ছোঁয়া আনলেও, এই আলোচনা কতটা বাস্তবায়িত হবে তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে। বিশেষ করে ইরানের সাম্প্রতিক হুমকি ও পরমাণু কর্মসূচি ঘিরে উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে।


বাজার বিশ্লেষকদের মত

বিশ্বখ্যাত গবেষণা সংস্থা ANZ-এর বিশ্লেষক ভিভেক ধর বলেন, “আলোচনার সম্ভাবনা অবশ্যই ইতিবাচক, তবে তেলের বাজার এক মুহূর্তে খুব সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। ফলে দাম কমলেও আতঙ্ক রয়েছে।”

তিনি আরও যোগ করেন, “যদি আলোচনায় কোনও অগ্রগতি না হয় বা নতুন কোনও হামলার খবর আসে, তাহলে Brent আবার $85–এর ওপরে চলে যেতে পারে।”

সরবরাহ ও মজুদের তথ্য

  • মার্কিন জ্বালানি বিভাগ জানায়, গত সপ্তাহে মার্কিন তেল মজুদ ৩.৬ মিলিয়ন ব্যারেল কমেছে, যা পূর্বাভাসের তুলনায় অনেক বেশি। এটি বাজারে চাহিদার ইঙ্গিত দেয়, তাই দাম কমে যাওয়া নিয়ে কিছুটা আশাবাদী থাকা যায়।
  • পাশাপাশি, ইরাকে এখনও কোনো বড় ধরণের সরবরাহ বিঘ্ন ঘটেনি। দেশটির রপ্তানি এখনও নিয়মিত চলছে, যা বাজারকে কিছুটা স্থিতিশীল রেখেছে।

সাধারণ মানুষের দুশ্চিন্তা: ব্যয় বাড়বে না তো?

বিশ্ববাজারে তেলের দামের ওঠানামা সরাসরি প্রভাব ফেলে সাধারণ মানুষের জীবনে—বিশেষ করে পরিবহন, বিদ্যুৎ এবং পণ্যের দামে। সাম্প্রতিক উত্তেজনার প্রেক্ষিতে অনেকে আশঙ্কা করছেন, এই মূল্যহ্রাস যদি ক্ষণস্থায়ী হয়, তাহলে আবারও জ্বালানির খরচ বাড়বে।

এদিকে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক প্রবাসী শ্রমিকদের পরিবারও চিন্তিত। যুদ্ধ বা উত্তেজনার কারণে যদি কাজ বন্ধ হয়ে যায়, তবে প্রবাসীদের আয় বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

ভবিষ্যদ্বাণী: সামনে কী আছে?

  • ওমানে আসন্ন বৈঠকে যদি কোনও বাস্তব অগ্রগতি হয়, তাহলে বাজারে বড় রকমের স্বস্তি আসতে পারে।
  • অন্যদিকে, যদি আলোচনায় ব্যর্থতা আসে, বা নতুন করে সামরিক উত্তেজনা বাড়ে, তাহলে বাজার আবারও অস্থির হয়ে উঠবে।
  • এই অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের প্রতি পরামর্শ হলো, “সতর্ক থাকুন এবং বাজার মনিটর করুন।”

রাজনৈতিক সমাধানই স্থিতিশীলতার চাবিকাঠি

তেলের বাজারের এই ওঠানামা শুধু অর্থনীতির বিষয় নয়—এটি বিশ্বশান্তির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। রাজনৈতিক সমাধানই দিতে পারে স্থায়ী স্বস্তি। আপাতত দামের পতনে স্বস্তি থাকলেও, উত্তেজনার মেঘ এখনো পুরোপুরি কেটেছে বলা যায় না।

- Advertisement -spot_img
Related News
- Advertisement -spot_img
Explore More
- Advertisement -spot_img