back to top

তেহরানকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলি হামলা, ট্রাম্পের ‘সতর্কবার্তা’ বিতর্কে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এ তেহরানের বাসিন্দাদের উদ্দেশে সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “Everyone should immediately evacuate Tehran!”। এই এক বাক্যের পরই যেন পুরো ইরান কেঁপে ওঠে আতঙ্কে। ট্রাম্পের বার্তার ঠিক পরপরই ইরানের রাজধানী তেহরানে একের পর এক বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়, যার ফলে হাজার হাজার মানুষ শহর ছেড়ে পালাতে শুরু করে। তেহরানের রাস্তা হয়ে ওঠে ভীতিকর এক মিছিল, যেখানে মানুষ জীবন বাঁচাতে গাড়ি, বাইক কিংবা হেঁটেই ছুটছে শহর ছাড়ার উদ্দেশ্যে।

Source: BBC News Bangla | 17 June 2025 | Pic: Collected


এই ঘটনাটি ঘটেছে ঠিক তখনই, যখন ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে পঞ্চম দিনের মতো যুদ্ধ চলছে। ইসরায়েল ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলিতে একের পর এক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে এবং পাল্টা জবাব দিচ্ছে ইরান। সোমবার রাতেই ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় তেহরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবন, পশ্চিম ইরানের দুটি মিসাইল ঘাঁটি, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়।

জি-৭ সম্মেলনে অংশ নিতে কানাডায় অবস্থান করছিলেন ট্রাম্প। সেখান থেকেই তিনি মধ্যপ্রাচ্যের চলমান উত্তেজনার বিষয়ে একাধিক মন্তব্য করেন। একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমি ইরানকে ৬০ দিন সময় দিয়েছিলাম পারমাণবিক চুক্তিতে আসতে। আর ৬১তম দিনে কী হলো, আপনারা সবাই দেখেছেন। যদি তারা চুক্তি না করে, তাহলে তারা চরম ভুল করবে।” যদিও ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই উত্তেজনায় যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িত নয়, তবে হোয়াইট হাউস সূত্রে জানা যায়, তিনি নির্ধারিত সময়ের আগেই সম্মেলন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসেন এবং জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক আহ্বান করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ঘোষণা দিয়েছেন, মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েনকৃত মার্কিন সেনাদের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। তবে তিনি স্পষ্ট করেছেন, এই পদক্ষেপ কেবলমাত্র মার্কিন বাহিনীর সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য নেওয়া হচ্ছে, কোনো সামরিক আগ্রাসনের উদ্দেশ্যে নয়।

অন্যদিকে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেছেন, “ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীকে থামানোর জন্য ওয়াশিংটনের একটি ফোনকলই যথেষ্ট।” তার এই মন্তব্য ইঙ্গিত দেয়, কূটনৈতিকভাবে ইরান এখনো যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ চায়—তবে আগ্রাসন নয়, শান্তি প্রতিষ্ঠায়।

ইতিমধ্যে, চীনের দূতাবাস ইসরায়েলে অবস্থানরত নিজ দেশের নাগরিকদের “যত দ্রুত সম্ভব” দেশটি ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তারা বিশেষ করে জর্ডান সীমান্ত দিয়ে ইসরায়েল ত্যাগ করার পরামর্শ দিয়েছে এবং সতর্ক করেছে, চলমান ইসরায়েল-ইরান সংঘর্ষ বেসামরিক অবকাঠামোর চরম ক্ষতি এবং সাধারণ মানুষের প্রাণহানির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের “তেহরান ত্যাগের” বার্তা হয়তো কৌশলগত চাপ প্রয়োগ, যার মাধ্যমে ইরানকে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে সমঝোতায় বাধ্য করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। তবে এই সতর্কবার্তা বাস্তব দুশ্চিন্তায় রূপ নিয়েছে তেহরানের সাধারণ নাগরিকদের জন্য, যারা আজ প্রাণভয়ে শহর ছেড়ে পালাচ্ছেন। তেহরানের আকাশে এখন আতঙ্কের ছায়া, আর রাজপথে ভিড় শুধুই বাঁচার আর্তনাদ।

- Advertisement -spot_img
Related News
- Advertisement -spot_img
Explore More
- Advertisement -spot_img