ভারতের উদ্বেগের কেন্দ্রে এখন দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক মানচিত্রে এক নতুন মোড়—বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সামরিক সহযোগিতার পুনরুজ্জীবন। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল ঢাকায় সফর করে, যা দিল্লির কূটনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

Source: Opindia | 17 May 2025 | Pic: Collected
এই সফরের নেতৃত্ব দেন আইএসআই-এর বিশ্লেষণ বিভাগের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাহিদ আমির আফসার। তারা ঢাকায় পৌঁছানোর পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন করেন এবং সামরিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন। এই সফরের আগে, বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান পাকিস্তান সফর করেন এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের সঙ্গে বৈঠক করেন।
এই সামরিক বিনিময়গুলি ২০০৯ সালের পর প্রথম, যখন আইএসআই-এর একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক কার্যত বন্ধ ছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার পতনের পর, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্ক নতুন মাত্রা পেয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই উন্নয়ন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, “আমরা আমাদের আশেপাশের সব কার্যক্রমের ওপর নজর রাখছি এবং জাতীয় নিরাপত্তা প্রভাবিত হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের এই ঘনিষ্ঠতা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে। কারণ, অতীতে আইএসআই বাংলাদেশের মাটিকে ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলিকে সহায়তা করেছিল। এই প্রেক্ষাপটে, বর্তমান সামরিক বিনিময়গুলি দিল্লির জন্য উদ্বেগের কারণ।
এছাড়া, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সরাসরি বাণিজ্য পুনরায় শুরু করেছে এবং সামরিক মহড়ায় একসঙ্গে অংশ নিচ্ছে। এই পরিবর্তনগুলি দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক ভারসাম্যে নতুন সমীকরণ তৈরি করছে।
এই প্রেক্ষাপটে, ভারতের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়ন এবং কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণ। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির পরিবর্তন এবং পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ভারতের নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক স্বার্থের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার এই নতুন ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায়, ভারতের জন্য সময় এসেছে কৌশলগত পুনর্বিবেচনার এবং প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন দিক নির্ধারণের।