গত শনিবার সকালে ক্যালিফোর্নিয়ার পাম স্প্রিংসে একটি ফার্টিলিটি ক্লিনিকে ভয়াবহ গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে একজন নিহত এবং চারজন আহত হয়েছেন। এফবিআই এই ঘটনাকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে ঘোষণা করেছে। নিহত ব্যক্তি, ২৫ বছর বয়সী গাই এডওয়ার্ড বার্টকাস, নিজেই বিস্ফোরণের জন্য দায়ী বলে ধারণা করা হচ্ছে।

Source: Politico | 20 May 2025 | Pic: Collected
বার্টকাসের বাড়ি টুয়েন্টিনাইন পামসে তল্লাশি চালিয়ে তদন্তকারীরা তার লেখা একটি ৩০ মিনিটের অডিও ম্যানিফেস্টো উদ্ধার করেছেন, যেখানে তিনি নিজেকে ‘প্রো-মর্টালিস্ট’ বা ‘জীবনবিরোধী’ হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। তিনি লেখেন, “আমি ক্ষুব্ধ যে আমাকে জন্ম দেওয়া হয়েছে, অথচ আমার সম্মতি নেওয়া হয়নি।”
এই বিস্ফোরণে আমেরিকান রিপ্রোডাকটিভ সেন্টারস (ARC) ক্লিনিকের অফিস অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, সংরক্ষিত ভ্রূণ ও ডিম্বাণুগুলো অক্ষত রয়েছে। ক্লিনিকের পরিচালক ড. মাহের আবদাল্লাহ জানান, “সৌভাগ্যক্রমে, সেদিন কোনো রোগী উপস্থিত ছিলেন না।”
এফবিআই-এর লস অ্যাঞ্জেলেস ফিল্ড অফিসের সহকারী পরিচালক আকিল ডেভিস বলেন, “এই হামলা ছিল একটি IVF ক্লিনিককে লক্ষ্য করে পরিকল্পিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।” তিনি এটিকে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বোমা হামলার ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেন।
তদন্তে জানা গেছে, বার্টকাস অনলাইনে ‘এফিলিজম’ নামক একটি চরমপন্থী অ্যান্টিনাটালিস্ট গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এই গোষ্ঠী বিশ্বাস করে, জীবনের অস্তিত্বই একটি ভুল এবং মানবজাতির বিলুপ্তি কাম্য। বার্টকাসের অনলাইন পোস্টে স্যান্ডি হুক হামলাকারী অ্যাডাম ল্যানজা এবং সম্প্রতি আত্মহত্যা করা সোফি টিনির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ পেয়েছে।
বার্টকাসের বাবা রিচার্ড বার্টকাস জানান, তার ছেলে ছোটবেলায় বুদ্ধিমান ও সদয় ছিল, কিন্তু পরবর্তীতে চরমপন্থী চিন্তাধারায় প্রভাবিত হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, “সে হয়তো কোনোভাবে ‘ব্রেইনওয়াশড’ হয়ে গিয়েছিল।”
এই ঘটনার পর Reddit প্ল্যাটফর্ম ‘r/efilism’ নামক অ্যান্টিনাটালিস্ট সাবরেডিটটি নিষিদ্ধ করেছে, যা সহিংসতা উসকে দেওয়ার অভিযোগে বন্ধ করা হয়েছে।
এই হামলা কেবল একটি ক্লিনিককে নয়, বরং সমাজের প্রজনন অধিকার ও নারীর স্বাস্থ্যসেবাকে লক্ষ্য করে পরিচালিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া চরমপন্থী দর্শন তরুণদের মধ্যে হতাশা ও সহিংসতার জন্ম দিচ্ছে। ক্রিমিনোলজি অধ্যাপক অ্যাডাম ল্যাংকফোর্ড বলেন, “এই ধরনের দর্শন তরুণদের মধ্যে জীবনের প্রতি ঘৃণা ও নিরাশা সৃষ্টি করছে, যা তাদের সহিংসতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।”
বার্টকাসের এই হামলা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া চরমপন্থী দর্শন কীভাবে বাস্তব জীবনে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। সমাজের সকল স্তরে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করা এখন সময়ের দাবি।