বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে, ২০১৬ সালে ১ লাখেরও বেশি ইসলামি আলেম ও মুফতির স্বাক্ষরে একটি ফতোয়া জারি করা হয়, যা সন্ত্রাস ও আত্মঘাতী হামলাকে ‘হারাম’ বা ইসলামবিরোধী ঘোষণা করে। এই ফতোয়ার নেতৃত্ব দেন শোলাকিয়া ঈদগাহের প্রধান ইমাম ও বাংলাদেশ জমিয়াতুল উলামার চেয়ারম্যান আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ।

Source: VOA News | 17 May 2025 | Pic: Collected
এই ৩২ পৃষ্ঠার ফতোয়ায় কোরআন ও হাদিসের আলোকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে, নিরীহ মানুষ হত্যা, আত্মঘাতী হামলা এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ ইসলাম সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করেছে। ফতোয়ায় বলা হয়, যারা সন্ত্রাসে লিপ্ত, তাদের জানাজায় অংশগ্রহণ করাও হারাম। এটি ‘Fatwa of Peace for Humanity’ নামে পরিচিত এবং এটি ৩০টি খণ্ডে সংরক্ষিত হয়েছে, যেখানে প্রায় ১০,০০০ নারী আলেমের স্বাক্ষরও রয়েছে।
ফতোয়ায় বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, অমুসলিমদের হত্যা ও তাদের উপাসনালয়ে হামলা ইসলামবিরোধী। প্রবীণ আলেম ফরিদ উদ্দিন মাসউদ বলেন, “যদি কোনো মুসলিম অমুসলিমকে হত্যা করে, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।”
এই ফতোয়া জারির পর, ২০১৬ সালের ৭ জুলাই শোলাকিয়া ঈদগাহে ফরিদ উদ্দিন মাসউদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়, যেখানে দুই পুলিশ সদস্যসহ তিনজন নিহত হন এবং ১৬ জন আহত হন। এই ঘটনা ফতোয়ার গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিকতা আরও বাড়িয়ে তোলে।
এই ফতোয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, জাতিসংঘ ও ওআইসিসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থায় প্রেরণ করা হয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে এবং সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টায় একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সংগঠনিক সম্পাদক উইলিয়াম প্রলয় সমাদ্দার বলেন, “এই ফতোয়া সন্ত্রাসীদের বোঝাতে সাহায্য করবে যে তারা ভুল পথে রয়েছে এবং এটি তাদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “এই ফতোয়া সাধারণ মুসলমানদের সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমে অংশ নিতে অনুপ্রাণিত করবে।”
বাংলাদেশের ১ লাখ আলেমের এই ঐক্যবদ্ধ ফতোয়া সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি ধর্মীয় সহনশীলতা ও শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে সহায়ক হবে এবং সমাজে সন্ত্রাসবিরোধী সচেতনতা বৃদ্ধি করবে।