বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফের হঠাৎ ছুটিতে যাওয়া এবং দেশের বাইরে চলে যাওয়া কূটনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র অনুযায়ী, ১১ মে তিনি কোনো আনুষ্ঠানিক প্রটোকল ছাড়াই এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকা ত্যাগ করেন। বর্তমানে তিনি ছুটিতে রয়েছেন এবং পাকিস্তানে অবস্থান করছেন।

Source: The Sentinel | 14 May 2025 | Pic: Collected
স্থানীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, মারুফের এই আকস্মিক প্রস্থানের পেছনে কক্সবাজারের একটি হোটেলে এক নারীর সঙ্গে তার আপত্তিকর সম্পর্কের অভিযোগ রয়েছে। এই নারী বাংলাদেশের একটি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলে জানা গেছে। তাদের সম্পর্কের বিষয়টি পাকিস্তান হাইকমিশনের কর্মকর্তারাও জানতেন, কারণ ওই নারী নিয়মিত মারুফের সঙ্গে দেখা করতেন। তবে সর্বশেষ কক্সবাজার সফরে তাদের সম্পর্ক আরও প্রকাশ্য হয়ে পড়ে, যা পাকিস্তান সরকারকে মারুফকে প্রত্যাহার করতে বাধ্য করে।
এই ঘটনাটি কেবল ব্যক্তিগত কেলেঙ্কারি নয়, বরং কূটনৈতিক সম্পর্কের দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। মারুফের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি বাংলাদেশে অবস্থানকালে বিভিন্ন চরমপন্থী গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। ফেব্রুয়ারিতে কক্সবাজার সফরের সময় তিনি আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (ARSA) এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এই বৈঠকে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন। এই সংগঠনগুলো আন্তর্জাতিকভাবে চরমপন্থী হিসেবে পরিচিত এবং তাদের সঙ্গে পাকিস্তানের হাইকমিশনারের যোগাযোগ বাংলাদেশে পাকিস্তানের প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
মারুফের এই আচরণ এবং তার সঙ্গে চরমপন্থী গোষ্ঠীর যোগাযোগ বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক সম্পর্কের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনা বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পেতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে, পাকিস্তান সরকার এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে কূটনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে যে, মারুফের এই প্রস্থান কেবল একটি ব্যক্তিগত কেলেঙ্কারি নয়, বরং এটি পাকিস্তানের একটি বৃহত্তর কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ হতে পারে, যার মাধ্যমে তারা বাংলাদেশে চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করতে চায়।
বাংলাদেশ সরকার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা এবং প্রয়োজনে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করা যায় এবং দেশের নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক সম্পর্ক সুরক্ষিত থাকে।