বলিউডকে নিয়ে দর্শকদের মাঝে সবসময় এক ধরনের কৌতূহল কাজ করে। মানুষ ভাবে এই ইন্ডাস্ট্রি মানেই আলো ঝলমলে পরিবেশ, বড় বড় পার্টি, নামি দামী অভিনেতা-অভিনেত্রীর ঝলকানি আর স্বপ্নময় জীবন। কিন্তু বাস্তবে এই জগৎ এতটা সহজ নয়। সম্প্রতি জনপ্রিয় অভিনেত্রী কৃতি শ্যানন খোলাখুলি মুখ খুলেছেন এই অন্ধকার বাস্তবতা নিয়ে। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, বলিউডে প্রবেশ করাটা যেমন কঠিন, টিকে থাকাটা তার থেকেও বেশি কষ্টকর। প্রতিদিন অডিশনের দৌড়, বারবার প্রত্যাখ্যান, বড় ব্যানার বা প্রযোজকের কাছে সুযোগ না পাওয়া, পরিচিত কারো সমর্থন না থাকলে প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও পিছিয়ে পড়া—এসবই এখানে নিত্যদিনের বাস্তবতা। কৃতি বলেন, অনেক সময় মনে হয়েছিল তার স্বপ্ন হয়তো এখানেই থেমে যাবে। কিন্তু নিজের প্রতি আস্থা আর পরিবারের সমর্থন তাকে লড়াই চালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।
2 September 2025 | Pic: Collected
অভিনেত্রী আরো জানান, এই ইন্ডাস্ট্রিতে প্রতিনিয়ত প্রতিযোগিতা চলছে। সবাই চায় সামনে আসতে, সবাই চায় আলোতে থাকতে। কিন্তু এর পেছনে যে চাপ, মানসিক অস্থিরতা আর হতাশা থাকে, তা অনেকেই কল্পনাও করতে পারে না। কৃতির মতে, একজন শিল্পীর জন্য সবচেয়ে বড় লড়াই হলো নিজের আত্মবিশ্বাস ধরে রাখা। তিনি বলেন, গ্ল্যামার আর লাইট-ক্যামেরার ঝলকানি মানুষ দেখে, কিন্তু এর আড়ালে যে অশ্রু, হতাশা আর মানসিক যন্ত্রণা থাকে তা কেউ দেখে না। এই ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকেই সফল হতে না পেরে ভেঙে পড়েন, এমনকি অনেক সময় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। কৃতি খোলাখুলি বলেন, বলিউডে শুধু প্রতিভা থাকলেই হবে না। এখানে যোগাযোগ, প্রভাব আর রাজনৈতিক খেলার মতো বিষয়গুলোও ক্যারিয়ার গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তিনি মনে করেন, এটা শিল্পীদের প্রতি অন্যায়। কারণ একজন মানুষ বছরের পর বছর পরিশ্রম করলেও হয়তো সুযোগ পাবেন না শুধু প্রভাবশালী কারো সমর্থন না থাকার কারণে।
তার মতে, বলিউডে টিকে থাকতে হলে শুধু অভিনয় জানলেই হবে না। শক্ত মানসিকতা, ধৈর্য, এবং নিজেকে প্রমাণ করার ইচ্ছাশক্তি থাকতে হবে। কৃতি বলেন, “অনেক সময় মনে হয়েছে আমি হয়তো হেরে যাচ্ছি। কিন্তু আমি আমার পরিবারকে দেখে সাহস পেয়েছি। তারা সবসময় আমাকে বলেছে, হাল ছেড়ো না। আর সেই কারণেই আমি আজ এখানে।” এই স্বীকারোক্তি ভক্তদের হৃদয় ছুঁয়েছে। কারণ সাধারণ মানুষ বলিউডকে সবসময় এক রূপকথার জগৎ হিসেবে দেখে, কিন্তু ভেতরের বাস্তবতা এতটা কঠিন সেটা খুব কম মানুষই জানে।
কৃতি আরও বলেন, তার ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে তিনি অনেক অডিশনে ব্যর্থ হয়েছেন। অনেক পরিচালকই তাকে সুযোগ দেননি, অনেক সময় অবজ্ঞার শিকার হয়েছেন। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। তিনি বিশ্বাস করেন, যে কোনও জায়গায় নিজের জায়গা তৈরি করতে হলে ধৈর্য ধরে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়। তবে তিনি এটাও স্বীকার করেন যে অনেক প্রতিভাবান শিল্পী এই ইন্ডাস্ট্রিতে সুযোগ না পেয়ে ভেঙে পড়েন। এটাই বলিউডের অন্ধকার দিক।
অভিনেত্রীর মতে, ইন্ডাস্ট্রির এই দিকগুলো নিয়ে কেউ খুব বেশি কথা বলে না। সবাই শুধু সফলতার গল্প শোনে। কিন্তু ব্যর্থতার গল্পগুলো আড়ালেই থেকে যায়। তিনি বলেন, “যদি আমি এসব নিয়ে চুপ থাকি, তাহলে আমি মিথ্যে বলবো। বলিউডের ঝলমলে আলোয় যতটা সুখ দেখা যায়, তার আড়ালে ততটা কষ্ট লুকিয়ে থাকে।” কৃতির খোলামেলা স্বীকারোক্তি বলিউডে কাজ করা তরুণ প্রজন্মকে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করেছে। অনেকেই মনে করছেন, এই ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশের আগে বাস্তবতা জেনে রাখা জরুরি।
তার বক্তব্যে উঠে এসেছে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। তা হলো শিল্পীদের মানসিক স্বাস্থ্য। কৃতি স্পষ্ট করেছেন যে এখানে কাজ করার চাপ এতটাই বেশি যে অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। কেউ কেউ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন, কেউ আবার সম্পূর্ণভাবে ক্যারিয়ার ছেড়ে দেন। তিনি মনে করেন, শিল্পীদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও নজর দেওয়া প্রয়োজন। তিনি আশা করেন, ভবিষ্যতে এই ইন্ডাস্ট্রি এমনভাবে কাজ করবে যেখানে শুধু প্রতিভা নয়, সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি হবে।
কৃতির এই বক্তব্য প্রকাশের পর বলিউড মহল ও দর্শক সমাজে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, তার এই কথা ইন্ডাস্ট্রির আসল চিত্র সামনে এনেছে। আবার অনেকে মনে করছেন, নতুনদের জন্য এটা এক ধরনের সতর্কবার্তা। বলিউড মানেই শুধু রূপকথা নয়, বরং কঠিন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জায়গা। কৃতির খোলামেলা কথার মাধ্যমে আবারও স্পষ্ট হলো যে এই গ্ল্যামার জগতের উজ্জ্বল আলোয় যতটা রঙিন ছবি দেখা যায়, ভেতরে ততটাই অন্ধকার লুকিয়ে থাকে।