বলিউডের কিং খান শাহরুখ খান ও জনপ্রিয় অভিনেত্রী দীপিকা পাডুকোনকে ঘিরে এবার বড় ধরনের আইনি ঝড় উঠেছে, কারণ রাজস্থানের ভরতপুর জেলায় এক গ্রাহকের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতারণার মামলা দায়ের করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি শুরু হয়েছিল ২০২২ সালে, যখন ভরতপুরের কিরণ সিং নামে এক ব্যক্তি হুন্ডাই কোম্পানির তৈরি ‘Alcazar’ নামের একটি এসইউভি ক্রয় করেন। তার দাবি, গাড়ি কেনার কিছুদিন পর থেকেই গাড়ির ইঞ্জিনে ত্রুটি দেখা দিতে থাকে—RPM হঠাৎ বেড়ে যায়, কিন্তু গতি বাড়ে না এবং প্রায়ই গাড়ির স্ক্রিনে ‘‘Engine Management System Malfunction’’ সতর্কবার্তা প্রদর্শিত হয়। ভোক্তা হিসেবে তিনি একাধিকবার ডিলারশিপে অভিযোগ জানালেও প্রতিবারই তাকে আশ্বাস দিয়ে ফেরত পাঠানো হয় এবং পরে জানানো হয় এটি আসলে নির্মাণজনিত সমস্যা, যা সারানো সম্ভব নয়।

29 August 2025 | Pic: Collected
এতে অসন্তুষ্ট হয়ে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হন। ভরতপুর CJM কোর্ট নং ২ নির্দেশ দেয় Mathura Gate থানাকে এ বিষয়ে একটি এফআইআর গ্রহণ করার জন্য। আদালতের নির্দেশের ভিত্তিতে পুলিশ ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২০ (প্রতারণা), ৪০৬ (অপরাধমূলক আস্থা ভঙ্গ), ১২০বি (ষড়যন্ত্র) সহ বিভিন্ন ধারায় Hyundai Motors, স্থানীয় ডিলার, সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং বিজ্ঞাপন প্রচারে যুক্ত ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর শাহরুখ খান ও দীপিকা পাডুকোনের বিরুদ্ধে মামলা নথিভুক্ত করে।
এখানে প্রশ্ন উঠছে—যে অভিযোগ মূলত একটি গাড়ির প্রযুক্তিগত ত্রুটি নিয়ে, সেখানে কেন শাহরুখ ও দীপিকার নাম আসছে? আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভোক্তা সুরক্ষা আইন ২০১৯ অনুযায়ী যেকোনো বিজ্ঞাপন যদি ভ্রান্ত বা বিভ্রান্তিকর হয় তবে শুধু কোম্পানি নয়, ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডরদেরও আইনি জবাবদিহিতার মুখে পড়তে হয়। কারণ সেলিব্রিটিরা পণ্য প্রচারে বিশ্বাসযোগ্যতার প্রতীক হয়ে ওঠেন এবং তাদের প্রভাবিত কথাবার্তার উপর ভিত্তি করেই অনেক গ্রাহক কেনাকাটা করে থাকেন। অভিযোগকারী কিরণ সিং দাবি করেছেন, শাহরুখ ও দীপিকার মতো তারকাদের প্রচারণা দেখে তিনি গাড়িটি কিনেছিলেন, অথচ পরবর্তীতে পণ্যটি ‘ত্রুটিপূর্ণ’ প্রমাণিত হয়েছে। তাই আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধেও প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এই ঘটনা এখন শুধু একটি ভোক্তা অভিযোগের মামলা নয়, বরং বৃহত্তর পরিসরে সেলিব্রিটি এন্ডোর্সমেন্টের সীমা ও দায়িত্ব নিয়ে বিতর্ক উত্থাপন করেছে। ভারতীয় বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (ASCI) আগেও বলেছিল, তারকাদের উচিত প্রচারিত পণ্য সম্পর্কে যথাযথ যাচাই-বাছাই করা। কিন্তু বাস্তবে তা কতটা হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। যদি এই মামলা এগিয়ে যায় এবং আদালত ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডরদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়, তবে এটি বলিউড ও বিজ্ঞাপন জগতে বড় দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়াবে। কারণ এতদিন পর্যন্ত সাধারণত কোম্পানিই দায়ী হতো, সেলিব্রিটিরা সরাসরি আইনি জটিলতায় জড়াতেন না।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, শাহরুখ খান দীর্ঘদিন ধরে হুন্ডাইয়ের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করছেন এবং দীপিকা পাডুকোনকেও বিভিন্ন মডেলের বিজ্ঞাপনে দেখা গেছে। ফলে অভিযোগকারীর বক্তব্য অনুযায়ী, তারা পণ্যের গুণগত মান নিয়ে সাধারণ গ্রাহকদের বিভ্রান্ত করেছেন। যদিও এখনো শাহরুখ, দীপিকা বা তাদের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে বিনোদন জগতে এ নিয়ে বড় ধরনের আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, শুধুমাত্র প্রচারণা করার কারণে একজন তারকাকে দায়ী করা উচিত কি না, তা আদালতকেই নির্ধারণ করতে হবে। আবার ভোক্তা অধিকারকর্মীরা মনে করছেন, এটি একটি যুগান্তকারী মামলা, যা ভবিষ্যতে সেলিব্রিটিদের দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দেবে।
সব মিলিয়ে রাজস্থানের এই মামলা শুধু শাহরুখ ও দীপিকার জন্য নয়, ভারতের সমগ্র বিজ্ঞাপন ও ব্র্যান্ডিং ইন্ডাস্ট্রির জন্যও একটি টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে। কারণ যদি আদালত কঠোর রায় দেয়, তবে ভবিষ্যতে সেলিব্রিটিরা হয়তো যেকোনো পণ্যের বিজ্ঞাপনের আগে বিস্তারিত খোঁজখবর নিতে বাধ্য হবেন, যাতে সাধারণ ক্রেতারা প্রতারিত না হয়। বর্তমানে এই মামলা প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও এটি দেশব্যাপী আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং বলিউডের দুই সুপারস্টারকে ঘিরে জনগণের কৌতূহল তুঙ্গে পৌঁছেছে।