মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী ২০ বছরে তিনি তার প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদের অধিকাংশই আফ্রিকার স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে ব্যয় করবেন। এই ঘোষণা তিনি ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবায় আফ্রিকান ইউনিয়নের সদর দপ্তরে এক ভাষণে দেন।

Source: Ittefaq | 3 June 2025 | Pic: Collected
গেটস বলেন, “আমি সম্প্রতি প্রতিজ্ঞা করেছি যে, আগামী ২০ বছরে আমার সম্পদ দান করা হবে। এই তহবিলের বেশিরভাগই আফ্রিকার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যয় করা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে আফ্রিকার প্রতিটি দেশকে একটি সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যেতে হবে।”
গেটস ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, তাদের তিনটি বিষয়ে অগ্রাধিকার রয়েছে: মা ও শিশুর প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু বন্ধ করা, পরবর্তী প্রজন্ম যাতে ভয়াবহ সংক্রামক রোগে না ভোগে সেজন্য তাদের বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করা এবং লাখো মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করা।
গেটস বলেন, “আমরা শিখেছি গর্ভবতী হওয়ার আগে মাকে সুস্থ থাকতে হবে এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। তাহলেই যখন তিনি গর্ভবতী হবেন তখন শক্তিশালী ফলাফল আসবে।”
তিনি আরও বলেন, “শিশুরা তাদের প্রথম চার বছরে ভালো পুষ্টি পাবে এটা নিশ্চিত করলেই পার্থক্য তৈরি হবে।”
তরুণ উদ্ভাবকদের উদ্দেশে গেটস বলেন, “মোবাইল ফোন আফ্রিকায় ব্যাংকিংয়ে বিপ্লব এনে দিয়েছে। এখন সময় এসেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করে স্বাস্থ্যসেবায় নতুন বিপ্লব ঘটানোর।”
তিনি রুয়ান্ডার উদাহরণ দিয়ে বলেন, “উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থা শনাক্ত করার জন্য তারা ইতোমধ্যেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সক্ষম আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহার করে এই সেবার উন্নয়ন ঘটিয়েছে।”
গেটস ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, ২০ বছর পরে ফাউন্ডেশন তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেবে। গত মাসে গেটস বলেছিলেন, ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তিনি তার এই দান কার্যক্রম ত্বরান্বিত করবেন।
এক ব্লগ পোস্টে বিল গেটস লিখেছেন, “আমি মারা গেলে মানুষ আমার সম্পর্কে অনেক কথা বলবে। কিন্তু ‘তিনি ধনী হয়ে মারা গিয়েছেন’ এ কথা সেগুলোর মধ্যে থাকবে না বলে আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।”
ব্লুমবার্গের মতে, বর্তমানে বিশ্বের পঞ্চম ধনী বিল গেটস তার সম্পদের ৯৯ শতাংশ দান করে দিলেও বিলিয়নিয়ারই থেকে যাবেন।
১৯৭৫ সালে পল অ্যালেনের সঙ্গে গেটস মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। প্রতিষ্ঠার পর রাতারাতি কোম্পানিটি সফটওয়্যার এবং অন্যান্য প্রযুক্তি শিল্পে প্রভাবশালী শক্তি হয়ে ওঠে।
সাম্প্রতিক দশকগুলোতে গেটস ধীরে ধীরে কোম্পানির বিভিন্ন পদ থেকে সরে আসেন। ২০০০ সালে প্রধান নির্বাহী এবং ২০১৪ সালে তিনি চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেট এবং অন্যান্য দানশীল ব্যক্তিদের কাছ থেকে অর্থ দান করার বিষয়ে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন বলে তিনি জানান।
যদিও তার ফাউন্ডেশনের সমালোচনা করেন এমন ব্যক্তিরা বলছেন, গেটস কর এড়াতে তার দাতব্য স্ট্যাটাস ব্যবহার করেন এবং বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর এর অযৌক্তিক প্রভাব রয়েছে।
বিল গেটসের এই উদ্যোগ আফ্রিকার স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।