রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে শুক্রবার বিকেলে যেন ইতিহাসের গর্জন ফিরে এলো। “নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা” কর্মসূচি থেকে নারী অধিকার ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার জোরালো দাবি জানালেন সমাজের নানা স্তরের নারীরা। কর্মসূচির মূল আকর্ষণ ছিল ‘জুলাই শহীদ’ পরিবারের তিন নারী সদস্যের পাঠ করা ঘোষণাপত্র, যা একদিকে যেমন আবেগময়, তেমনি তীব্র রাজনৈতিক বার্তায় পরিপূর্ণ।

Source: Samakal | 16 May 2025 | Pic: Collected
ঘোষণাপত্রে বলা হয়— “চব্বিশের অভূতপূর্ব জুলাই অভ্যুত্থানের পর আমরা এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে পরিবর্তনের স্বপ্ন ও ভয় একসাথে মিশে গেছে। এই মৈত্রীযাত্রায় আমরা একসাথে হাঁটছি, সাম্য ও ন্যায়ের স্বপ্ন নিয়ে।”
এতে উল্লেখ করা হয়, এই কর্মসূচিতে অংশ নেন সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি—চা শ্রমিক, যৌনকর্মী, তৃতীয় লিঙ্গ, প্রতিবন্ধী, আদিবাসী, অবাঙালি সম্প্রদায়, গার্মেন্টস শ্রমিক থেকে শুরু করে তরুণ-তরুণী ও শিক্ষার্থীরা। তাদের কণ্ঠে ছিল স্পষ্ট বার্তা: “আমরা বৈষম্যকে মেনে নেবো না, অপমানের বিরুদ্ধে দাঁড়াবো।”
সরকার চুপ, পিতৃতন্ত্র সক্রিয়’ — তীব্র অভিযোগ
ঘোষণাপত্রে সরকারকে দায়ী করে বলা হয়, অভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকার গঠনের পরেও নারীদের ওপর নিপীড়ন থেমে নেই। বরং পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা এবং প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী নানা উপায়ে নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করছে।
বিশেষভাবে তুলে ধরা হয় অনলাইন হয়রানি, যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণ, প্রকাশ্যে হামলা ও মোরাল পুলিশিংয়ের মতো সহিংসতা, যার বিরুদ্ধে সরকার নিরব থেকেছে। উল্লেখ করা হয়, নারীর ওপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরকারের নীরবতা “আশ্চর্যজনক ও অগ্রহণযোগ্য”।
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে ষড়যন্ত্র?
ঘোষণাপত্রে বিস্তারে তুলে ধরা হয় নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের ভূমিকা। জানা যায়, এই কমিশন ৪৩৩টি সুপারিশ করলেও তা ঘিরে ব্যাপক অপপ্রচার চালানো হয়েছে। মূল অধিকার সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে ইচ্ছাকৃতভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে এবং কমিশনের সদস্যদের জনসমক্ষে অপমানিত করা হয়েছে।
এ নিয়ে ঘোষণাপত্রে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয়, “সরকার নিজেই যখন নিজের তৈরি কমিশনের সদস্যদের অপমানে নিশ্চুপ থাকে, তখন পরিবর্তনের স্বপ্ন শুধু প্রশ্নবিদ্ধই নয়, ব্যর্থও হয়।”
তিন দফা দাবি: যা এখনই মেনে নিতে হবে
ঘোষণাপত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি তিনটি মূল দাবি জানানো হয়:
- নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংসতা ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
- নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ও সংস্কারের ভাষায় নয়—প্রার্থীদের মধ্যে অন্তত ৩৩% নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
- নারী ও প্রান্তিক জনগণের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে।
‘আমরা থামবো না, পিছু হটবো না’—একটি ঘোষণা নয়, এক প্রজন্মের শপথ
ঘোষণাপত্রের শেষাংশ ছিল সবচেয়ে আবেগঘন ও উদ্দীপনাময়— “আমরা চুপ করবো না, হুমকির মুখে নত হবো না। আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে।” ঘোষণাপত্রে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়—তাদের নারী বিষয়ক অবস্থান নজরদারিতে রাখা হবে এবং পুরোনো ক্ষমতা কাঠামো ভাঙার আন্দোলন