মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম আন্তর্জাতিক সফরে মধ্যপ্রাচ্যে পৌঁছেছেন, যেখানে তিনি সৌদি আরব, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করছেন। এই সফরের মূল লক্ষ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বহুমূল্য বিনিয়োগ ও ব্যবসায়িক চুক্তি নিশ্চিত করা। তবে, এই সফর ব্যক্তিগত স্বার্থ ও নৈতিকতার প্রশ্নে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

Source: Washington Post | 13 May 2025 | Pic: Collected
সৌদি আরবে ট্রাম্পকে রাজকীয় সংবর্ধনা দেওয়া হয়, যেখানে তিনি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠক করেন। এই সফরে সৌদি আরব ৬০০ বিলিয়ন ডলার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত ১.৪ ট্রিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে, বিশেষজ্ঞরা এই প্রতিশ্রুতিগুলোর বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দিহান।
কাতারে ট্রাম্পের জন্য একটি বিলাসবহুল বোয়িং ৭৪৭-৮ জেট উপহার দেওয়ার প্রস্তাব এসেছে, যার মূল্য ৪০০ মিলিয়ন ডলার। এই জেটটি অস্থায়ীভাবে এয়ার ফোর্স ওয়ান হিসেবে ব্যবহৃত হবে এবং পরবর্তীতে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরিতে দান করা হবে। তবে, এই উপহারটি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের “Foreign Emoluments Clause” লঙ্ঘন করতে পারে, যা কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া বিদেশি উপহার গ্রহণ নিষিদ্ধ করে। এই বিষয়ে টাইম ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই উপহারটি ট্রাম্পের ব্যক্তিগত লাভের জন্য রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
এছাড়াও, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট শারা ট্রাম্পকে সিরিয়ায় একটি ট্রাম্প টাওয়ার নির্মাণ এবং খনিজ সম্পদে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছেন। এই প্রস্তাবের মাধ্যমে সিরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার চেষ্টা করছে। তবে, শারা এখনও যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসী তালিকায় রয়েছেন, যা এই প্রস্তাবকে আরও জটিল করে তুলেছে।
এই সফরে ট্রাম্পের সঙ্গে রয়েছেন বিভিন্ন মার্কিন ব্যবসায়িক নেতারা, যার মধ্যে ইলন মাস্ক, গুগল, এনভিডিয়া এবং ব্ল্যাকরকের শীর্ষ নির্বাহীরা রয়েছেন। তারা সৌদি-আমেরিকা বিনিয়োগ ফোরামে অংশ নিচ্ছেন, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, জ্বালানি এবং প্রতিরক্ষা খাতে চুক্তি স্বাক্ষরিত হচ্ছে।
তবে, এই সফর নিয়ে সমালোচকরা বলছেন, ট্রাম্পের ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক স্বার্থ এবং রাষ্ট্রের স্বার্থের মধ্যে সংঘাত স্পষ্ট। এই সফরের মাধ্যমে তিনি ব্যক্তিগত লাভের জন্য রাষ্ট্রের ক্ষমতা ব্যবহার করছেন, যা নৈতিকতা ও সংবিধানের পরিপন্থী।
ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর তার “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতির প্রতিফলন হলেও, এই সফর ব্যক্তিগত স্বার্থ, নৈতিকতা এবং সংবিধানের প্রশ্নে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এই সফরের মাধ্যমে তিনি যে চুক্তিগুলি করছেন, তা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য লাভজনক হতে পারে, তবে তার ব্যক্তিগত লাভের প্রশ্নে এই চুক্তিগুলি কতটা নৈতিক, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এই বিতর্কের সমাধান নির্ভর করবে কংগ্রেস এবং জনমতের উপর।