back to top

রাশিয়ার কঠোর শর্তে থমকে গেল ইউক্রেন শান্তি আলোচনা, যুদ্ধবিরতির বদলে নতুন উত্তেজনা

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের তৃতীয় বর্ষে পৌঁছেও শান্তির আলো দেখা যাচ্ছে না। বরং সম্প্রতি অনুষ্ঠিত শান্তি আলোচনায় রাশিয়া যে কঠোর এবং একতরফা শর্তসমূহ উপস্থাপন করেছে, তাতে যুদ্ধবিরতির বদলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বরাতে জানা গেছে, ইস্তানবুলে অনুষ্ঠিত শান্তি বৈঠকে রাশিয়ার পক্ষ থেকে এমন কিছু দাবি উত্থাপন করা হয়েছে, যা ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও আন্তর্জাতিক অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

Source: USA Today | 3 June 2025 | Pic: Collected


রাশিয়ার ‘শান্তির’ নামে শর্তের তালিকা

USA Today-এর অনুসন্ধানে জানা যায়, রাশিয়ার প্রধান শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের পরিকল্পনা চিরতরে পরিত্যাগ করতে হবে।
  • ইউক্রেনকে নিজেকে ‘নিরপেক্ষ রাষ্ট্র’ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।
  • রাশিয়ার দখলে থাকা অঞ্চল, যেমন ক্রিমিয়া ও ডনবাস–এর রুশ অধিকারে স্বীকৃতি দিতে হবে।
  • ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা সীমিত রাখতে হবে
  • রুশ ভাষার সরকারিভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং তথাকথিত ‘নাৎসি চেতনা’র অপসারণ ঘটাতে হবে।

এই দাবিগুলো ইউক্রেনের স্বাধীনতা ও কূটনৈতিক নীতিতে হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইউক্রেন স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে, এ ধরনের দাবি তারা কোনোভাবেই মেনে নেবে না।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “শান্তি চাই, তবে মাথা নত করে নয়।” তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে সরাসরি সংলাপের প্রস্তাব দিলেও, ক্রেমলিন এখনো সে বিষয়ে কোনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি।

ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, “রাশিয়া যদি সত্যিই শান্তি চায়, তাহলে তাদের উচিত শর্ত চাপিয়ে না দিয়ে সংলাপের মাধ্যমে পারস্পরিক সমঝোতার পথ খোঁজা।”

জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রসহ একাধিক রাষ্ট্র রাশিয়ার এসব দাবির নিন্দা জানিয়েছে এবং উভয় পক্ষকে নমনীয়তার মাধ্যমে বাস্তবসম্মত সমাধান খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছে। তবে ইউক্রেনের ভূখণ্ডের প্রশ্নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবস্থান এখনো স্পষ্ট ও একমুখী—রাশিয়ার আগ্রাসন কখনোই বৈধতা পেতে পারে না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, শান্তির নামে রাশিয়ার এ দাবি আসলে এক ধরনের রাজনৈতিক ও সামরিক আত্মসমর্পণের রূপরেখা, যা ইউক্রেনের স্বাধীনতা ও ভূখণ্ড রক্ষার চেষ্টাকে ধ্বংস করে দেবে।

ইউক্রেনের সাধারণ জনগণ এখনো যুদ্ধের যন্ত্রণা বহন করছে। কিয়েভের এক বাসিন্দা বলেন, “আমরা যুদ্ধ চাই না, কিন্তু আমাদের স্বপ্ন ও স্বতন্ত্রতা রক্ষার লড়াইও ছাড়তে পারি না।” এই বক্তব্যে ফুটে ওঠে ইউক্রেনের জনগণের দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাস।

যখন বিশ্বের নজর যুদ্ধবিরতির দিকে, তখন রাশিয়ার একপাক্ষিক ও কঠোর অবস্থান আশাবাদীদের হতাশ করছে। এ অবস্থায় শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা ক্ষীণ হলেও, সংলাপের দরজা খোলা রাখতে হবে—কারণ শেষ পর্যন্ত, রক্তপাত নয়, সমঝোতাই সত্যিকারের বিজয়।

- Advertisement -spot_img
Related News
- Advertisement -spot_img
Explore More
- Advertisement -spot_img