back to top

লন্ডন যাত্রায় ড. ইউনূস: রাজনৈতিক সমর্থন আদায়ে আন্তর্জাতিক বিধির মহামিলন

প্রবাসী আসন ও বিশ্বমঞ্চে আবারও আলোচনার ঝড় তুলতে পতাকা হাতে সেজেছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি আগামী ২ ফেব্রুয়ারিতে লন্ডন পৌঁছে যুক্তরাজ্যের রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এই বেড়াতে তার লক্ষ্য শুধুই ব্যক্তিগত আনাগোনা নয়, বরং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সমর্থন সংগ্রহ এবং নতুন রাজনৈতিক সংস্কার প্রক্রিয়ায় বৈশ্বিক গুরুত্ব আরোপ করা।

Source: Ittefaq | 4 June 2025 | Pic: Collected


ইত্তেফাক অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ড. ইউনূস প্রথমেই যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি গ্রুপ এবং টর্চ ব্রিটিশ কাউন্সিলে অংশ নেবেন। তিনি বৈঠকে সংশ্লিষ্টদের কাছে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও গৃহীত সংযমমূলক পদক্ষেপ তুলে ধরবেন। এতে যতটা নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে, ততটাই তারা জানতে আগ্রহী যে, “কিংস ব্রিজে” বসে এ অঞ্চলের মডেল হিসেবে **বাংলাদেশ কীভাবে সফল হতে পারে?”—এমন প্রশ্নের জবাব দান হবে।

ড. ইউনূসের টার্গেট তালিকায় রয়েছে ৬০ টি আন্তর্জাতিক মিডিয়া হাউস, যেখানে তিনি বাংলাদেশের “জুলাই গণ-অভ্যুত্থান” এবং অন্তর্বর্তী সরকারের “আগামী নির্বাচন” সংক্রান্ত বার্তা পৌঁছে দেবেন। এছাড়াও, তিনি ইকোনমিকস এন্ড সোশ্যাল কাউন্সিল (ইসিইএস) সহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা এবং বাংলাদেশি-বৃটিশ বিজনেস কাউন্সিল প্রতিনিধিদের সঙ্গেও কথা বলবেন। তাদের নেয়া সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে লন্ডনের চেম্বার অব কমার্স পর্যাপ্ত উদ্যোগ নিতে পারে বলে মনে করেন প্রধান উপদেষ্টা।

দেশের শাসন নিয়ে নতুন আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে ঢাকায়। অনেকেই বলছেন, ড. ইউনূসের লন্ডন সফর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে এক অভিনব পদক্ষেপ। রাজধানীর চিফ কার্ডিওলজিস্ট ডা. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম মন্তব্য করেন, “যখন একজন আর্থ-সামাজিক সংস্কারক বিশ্ববাজারে বাংলাদেশকে সরাসরি উপস্থাপন করবেন, তখন বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ উভয়েরই উৎসাহিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।” তাই এই সফর দেশের প্রচ্ছায় নয়, বরং দূরদৃষ্টির ছায়ায় অনেক দীর্ঘমেয়াদী ফল বয়ে আনবে—এমন আশায় আছেন বিশ্লেষকরা।

অন্যদিকে, বাংলাদেশি প্রবাসীদের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া শুনে পাওয়া যায়: “আমরা জানি, ড. ইউনূস শুধু রাজনীতিবিদ নয়, বরং বিশ্বমানের গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোক্তানোবেলজয়ী। তাঁর কণ্ঠে বাংলাদেশের স্বার্থ যেন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উচ্চস্বরে প্রতিধ্বনিত হয়।” লন্ডনে বসবাসরত সুলতানা খাতুন বলেন, “আমরা অপেক্ষা করছি, যেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া তার হাত ধরে আরও স্বচ্ছ এবং অংশগ্রহণমূলক হয়।”

ড. ইউনূসের সফরের আরেকটি দিক হলো মানবাধিকারশিক্ষা-স্বাস্থ্য সহায়তা। তিনি BMA (British Medical Association) এবং Edinburgh University Business School-এর সহায়তায় বাংলাদেশে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানাবেন। এর ফলে গ্রামীণ ব্যাংক মডেল বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্পের অংশ হিসেবে আলোচিত হতে পারে, যেখানে লন্ডন পর্বে গ্রামীণ ব্যাংকের সাফল্যকাহিনী তুলে ধরা হবে। এটাও মূল উদ্দেশ্য—বাংলাদেশের সামাজিক অর্থনীতির শক্তিকে আন্তর্জাতিক বন্ধন আরও দৃঢ় করা।

ইতোমধ্যে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে লন্ডন সফরের গুরুত্ব নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন করছেন—“ড. ইউনূস কি এবার সরকারের প্রতি সমর্থন আদায়ে রাজনৈতিক একতরফা নয়, বিরাসক্তি কাটিয়ে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানাবেন?” তাঁর আগে-পরের কর্মকাণ্ড এ প্রশ্নের একটি সম্ভাব্য উত্তরই বয়ে আনবে। ফলে এই সফর শুধু আলোচনাসভা নয়, বরং জাতীয় ঐক্যের মঞ্চ হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে।


ড. ইউনূস যদি আন্তর্জাতিক শক্তিকে একযোগে এনে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রসারে সরাসরি ভূমিকা নিতে সক্ষম হন, তবে আমরা দেখতে পাবো দেশের গণতন্ত্রে নতুন উজ্জীবন। তার এই লন্ডন সফর কেবলমাত্র কূটনীতিকী তালি নয়, বরং জাতীয় ঐক্য আর সামাজিক সু-উন্নয়নের টুকরো ধরা পাথর হতে পারে। এখন সময়—দেশের প্রত্যেক শ্রেণির মানুষকে সরব হয়ে ড. ইউনূসের আহ্বানে সাড়া দিতে; কারণ তিনি যে পথে হাঁটতে যাচ্ছেন, সেই পথ বহিঃবর্তনে বিচারিক নয়, বরং দেশপ্রেমের ধারায় ভাসিয়ে দেবে আমাদের আগামী নির্বাচনী ভবিষ্যৎ।

- Advertisement -spot_img
Related News
- Advertisement -spot_img
Explore More
- Advertisement -spot_img