back to top

হরমুজ প্রণালি বন্ধ করবে ইরান? বিশ্বজুড়ে জ্বালানি বাজারে ধসের আশঙ্কা

মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বড় আশঙ্কার নাম এখন হরমুজ প্রণালি
বিশ্বজুড়ে জ্বালানি সরবরাহের অন্যতম প্রধান এই সামুদ্রিক রুটটি যদি ইরান সামরিক কারণে বন্ধ করে দেয়, তবে তেলের দাম থেকে শুরু করে বিশ্ব অর্থনীতিতে ভয়াবহ প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

Source: BBC Bangla | 18 June 2025 | Pic: Collected


কৌশলগতভাবে কেন গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালি?

পারস্য উপসাগর এবং ওমান উপসাগরের সংযোগকারী এই সংকীর্ণ প্রণালিটি দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ২০ মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল পরিবাহিত হয়।
বিশ্বের মোট জ্বালানি সরবরাহের প্রায় ২০ শতাংশ নির্ভর করে এই পথের ওপর।
সবচেয়ে সংকীর্ণ স্থানে প্রণালির প্রস্থ মাত্র ৪০ কিলোমিটার—যা সামরিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা তুলনামূলকভাবে সহজ।

এই রুট দিয়ে সৌদি আরব, ইরান, কুয়েত, ইরাক, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি হয় ইউরোপ, আমেরিকা এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে।

ইরানের হুমকি কতটা বাস্তব?

সম্প্রতি ইরানের নৌবাহিনীর এক কমান্ডার ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, “পরিস্থিতি ঘোলাটে হলে হরমুজ প্রণালি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে ইরান।”
এই মন্তব্যের পরপরই আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম হঠাৎ করে বেড়ে যায়, এবং কূটনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

ইরান অতীতেও এই প্রণালি নিয়ে সামরিক মহড়া, ট্যাঙ্কার জব্দ এবং আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচলে বাধা সৃষ্টি করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রণালিটির ভৌগোলিক অবস্থান ইরানকে এতে উল্লেখযোগ্য সুবিধা দেয়।

গোয়েন্দা মহলের সতর্কতা

যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থা এমআই৬-এর সাবেক প্রধান স্যার অ্যালেক্স ইয়োঙ্গার সম্প্রতি বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন,

“সবচেয়ে ভয়াবহ যে পরিস্থিতি হতে পারে তা হলো হরমুজ প্রণালির অবরোধ। এর পরিণাম হবে বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য বিপর্যয়কর।”
তিনি আরও বলেন,
“এটি সরাসরি প্রভাব ফেলবে জ্বালানির দামে এবং বিশ্বের বড় অংশে সরবরাহে সংকট তৈরি হবে।”

সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব

বিশ্লেষকদের ধারণা, হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে বাজারে নিম্নোক্ত প্রভাব পড়তে পারে:

  • তেলের দাম: প্রতি ব্যারেল তেলের দাম $150 ছাড়িয়ে যেতে পারে (বর্তমানে গড়ে $85)।
  • জ্বালানি সংকট: ইউরোপ এবং পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো সরাসরি জ্বালানি ঘাটতির মুখে পড়বে।
  • মুদ্রাস্ফীতি: পরিবহন ব্যয় ও শিল্পখাতের খরচ বেড়ে যাবে, সাধারণ পণ্যের দামও বাড়বে।
  • বিনিয়োগ সংকট: শেয়ারবাজারে ধস এবং বাজারে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হবে।

প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বশক্তিগুলোর পদক্ষেপ

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো ইতিমধ্যে পারস্য উপসাগরে নৌবহর মোতায়েন করেছে।
তারা মনে করছেন, ইরান যদি হরমুজ প্রণালি বন্ধের মতো পদক্ষেপ নেয়, তবে তা আন্তর্জাতিক জলপথ অবরোধের শামিল, যা যুদ্ধ ঘোষণার সামিল হতে পারে।

আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, হরমুজ প্রণালিকে “International strait” হিসেবে বিবেচনা করা হয়—যার অর্থ, যুদ্ধকালেও এটি অবরোধ করা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।

হরমুজ প্রণালি শুধু মধ্যপ্রাচ্যের তেল রপ্তানির একটি পথ নয়, এটি বিশ্বজুড়ে জ্বালানির রক্তধারা।
ইরান যদি সত্যিই এই রুট বন্ধ করে দেয়, তাহলে শুধু ইসরায়েল নয়, গোটা বিশ্ব পড়বে চরম জ্বালানি সংকটে।
পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে রয়েছে, যেখানে একতরফা সামরিক সিদ্ধান্ত পুরো বৈশ্বিক ব্যবস্থাকে অচল করে দিতে পারে।

- Advertisement -spot_img
Related News
- Advertisement -spot_img
Explore More
- Advertisement -spot_img