বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম নৃশংস রাজনৈতিক হামলা হিসেবে পরিচিত ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিলের শুনানি শুরু হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সব আসামির খালাসের বিরুদ্ধে এই আপিলের শুনানি দেশের রাজনৈতিক ও বিচারিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার সূচনা করেছে।

Source: Ittefaq | 15 May 2025 | Pic: Collected
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এই হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভী রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন এবং তিন শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান।
২০১৮ সালে ঢাকার একটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল এই মামলায় ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করে। তবে ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট এই রায় বাতিল করে সব আসামিকে খালাস দেন, যা দেশজুড়ে বিতর্কের সৃষ্টি করে। হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, মামলার চার্জশিটে গুরুতর ত্রুটি ছিল এবং সাক্ষ্যপ্রমাণের ঘাটতি ছিল।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ লিভ টু আপিল করে, যার শুনানি ৬ মে থেকে শুরু হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা দাবি করছেন, হাইকোর্টের রায়ে বিচারিক আদালতের রায়কে ‘অবৈধ’ বলা হলেও, হামলার প্রকৃতি ও প্রমাণ উপেক্ষা করা হয়েছে। তারা আশা করছেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এই মামলায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে।
বিএনপি হাইকোর্টের রায়কে ‘ন্যায়বিচারের বিজয়’ হিসেবে দেখছে, অন্যদিকে আওয়ামী লীগ এই রায়কে ‘ন্যায়বিচারের পরাজয়’ বলে অভিহিত করেছে। সাধারণ জনগণের মধ্যেও এই রায় নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে মনে করছেন, এই রায় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নয়।
এই মামলার আপিল শুনানি দেশের বিচারব্যবস্থা ও রাজনৈতিক পরিবেশে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও রাজনৈতিক সহিংসতা প্রতিরোধে এই মামলার রায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।
এই মামলার আপিল শুনানি চলমান, এবং দেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক মহল এর ফলাফলের দিকে নজর রাখছে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্রের সুরক্ষায় এই মামলার রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।