উত্তর আমেরিকার মুসলিম সম্প্রদায় আগামী ৬ জুন, শুক্রবার পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপন করবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ইসলামিক সেন্টার অব নর্থ আমেরিকা (ICNA), এবং মুসলিম অ্যামেরিকান সোসাইটি (MAS) ইতোমধ্যে এই তারিখ ঘোষণা করেছে।

Source: Prothomalo NY | 3 June 2025 | Pic: Collected
যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের একটি বড় অংশই অভিবাসী—বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত, মিশর, সোমালিয়া, ফিলিস্তিন, এবং সিরিয়া থেকে আগত। এদের মধ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৮ লাখের কাছাকাছি, যার উল্লেখযোগ্য একটি অংশ বসবাস করছেন নিউইয়র্ক, নিউ জার্সি, ক্যালিফোর্নিয়া, মিশিগান, ফ্লোরিডা, পেনসিলভিনিয়া ও ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যে।
নিউইয়র্কে কেবল বাংলাদেশি অধ্যুষিত জ্যামাইকা, ব্রঙ্কস, ব্রুকলিন, ও জ্যাকসন হাইটসেই কয়েকশ মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার সক্রিয় রয়েছে। এসোসিয়েশন অব রিলেজিয়ন ডাটা আর্কাইভ এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, নিউইয়র্ক রাজ্যে মুসলিম উপাসনালয়ের সংখ্যা প্রায় ৩৫০টির বেশি। নিউইয়র্ক সিটিতে অন্তত ২১০টির মতো মসজিদ রয়েছে, যার মধ্যে বাংলাদেশি কমিউনিটির পরিচালিত মসজিদের সংখ্যা প্রায় ৭০-এর বেশি।
ঈদের দিন নিউইয়র্ক সিটির জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার, ব্রঙ্কস ইসলামিক কালচারাল সোসাইটি, মসজিদ আত-তাকওয়া (ব্রুকলিন), এবং জ্যাকসন হাইটস ইসলামিক সোসাইটির মতো স্থানে একাধিক ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। অনেক স্থানে সকাল ৭টা থেকে শুরু করে ১০টা পর্যন্ত তিনটি বা চারটি জামাতের আয়োজন করা হয়। অংশ নেন হাজার হাজার মুসল্লি। মসজিদে জায়গা না হলে বা আবহাওয়া অনুকূল থাকলে স্থানীয় পার্ক, স্কুল মাঠ বা কমিউনিটি সেন্টারে জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকেই মার্কিন প্রবাসী মুসলিমরা ঈদের শেষ প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। বাংলাদেশি মালিকানাধীন হালাল গ্রোসারি ও মাংসের দোকানে কোরবানির বুকিং দেয়া হয়ে গেছে। নিউইয়র্কের ব্রঙ্কস, জ্যামাইকা, ও কুইন্স এলাকাগুলোর স্লটারহাউজগুলোতে ঈদের জামাতের পর থেকে কোরবানি কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে।
এই সময়টিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হলো দেশে ঈদের কোরবানির জন্য অর্থ পাঠানো। কেউ বাবার নামে, কেউবা ভাই বা স্বজনের নামে পশু কেনার টাকা পাঠিয়ে দিয়েছেন। শুধুই কোরবানি নয়, ঈদের নতুন কাপড়, শিশুদের উপহার, মাদ্রাসায় সদকা—সব মিলিয়ে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বেড়ে যায় ঈদের আগের সপ্তাহে।
নিউইয়র্কসহ অনেক শহরে ঈদের দিন বাংলাদেশি ও অন্যান্য মুসলিম পরিবার তাদের অমুসলিম প্রতিবেশীদেরও নিমন্ত্রণ করেন। এক টেবিলে বসে খাওয়া, গল্প, আর কৌতূহলী প্রশ্নোত্তরের মধ্য দিয়ে ঈদ হয়ে ওঠে আন্তধর্মীয় সম্প্রীতির এক বাস্তব প্রতিচ্ছবি। অনেক আমেরিকান প্রতিবেশী ও সহকর্মী তাদের মুসলিম বন্ধুর কাছে কোরবানির মর্ম, হজের তাৎপর্য, কিংবা ইসলামের উৎসব সম্পর্কেও জানার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
ঈদুল আযহা প্রবাসে হয়ে উঠেছে এক আত্মিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক বন্ধনের উৎসব। উত্তর আমেরিকার মাটি জুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য এই ঈদ একটি অনুভব, একসাথে থাকা ও নিজের ধর্ম ও শেকড়কে মনে রাখার এক অনন্য উপলক্ষ।