আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী প্রশাসনের কাছে ছাত্র-জনতার অন্যতম অগ্রাধিকার ছিল—‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ। আন্দোলনের জোয়ারে পতিত সরকারের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ হলেও, সেই প্রতীক্ষিত ঘোষণাপত্র এখনো আলোর মুখ দেখেনি। নয় মাস পেরিয়ে গেলেও প্রতিশ্রুত প্রকাশ হয়নি, যার ফলে তরুণ সমাজে আবারও জন্ম নিচ্ছে অসন্তোষ।

Source: Ittefaq | 16 May 2025 | Pic: Collected
এই প্রেক্ষাপটে সামাজিক মাধ্যমে সরব হয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ। শুক্রবার (১৭ মে) ফেসবুকে ‘জুলাই বিপ্লব’-এর সময়কার একটি ভিডিও শেয়ার করে তিনি লিখেছেন— “জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়ার আর বাকি ২৬ কর্মদিবস।” এই বক্তব্যে তিনি যেন শুধুই একটি দিন গণনা করেননি, বরং স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন এক প্রজন্মের রাজনৈতিক প্রত্যাশা ও পরিবর্তনের দাবিকে।
প্রসঙ্গত, সর্বশেষ গত ১০ মে ছাত্র-জনতার চাপের মুখে অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণা দেয়—আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ করা হবে। ইতোমধ্যে কেটে গেছে ৪ দিন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই সরকারকে কোনো ঘোষণা দিতে না পারলে, আন্দোলন আবারও রাজপথে ফেরার সম্ভাবনা প্রবল।
এর আগেও অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে একাধিকবার ঘোষণাপত্র প্রকাশের সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল। সর্বশেষ গত ৩১ ডিসেম্বর শহীদ মিনারে একটি প্রতীকী ঘোষণাপত্র প্রকাশের প্রস্তুতি নেয় ছাত্র সমাজ। কিন্তু তার আগের দিন রাতে সরকারের জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, সরকার নিজেই এই দায়িত্ব নেবে। তখন আন্দোলন স্থগিত করা হলেও ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু সময়মতো প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয় সরকার।
‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ শুধু একটি রাজনৈতিক দলিল নয়, এটি ছাত্র-জনতার কাঙ্ক্ষিত নতুন রাষ্ট্র কাঠামো, রাজনৈতিক সংস্কার ও সুশাসনের প্রতিশ্রুত রূপরেখা। অনেকের মতে, এই ঘোষণাপত্রই অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা এবং ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনার মৌলিক ভিত্তি।
জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ যিনি শেখ হাসিনার পতনের সময় রাজপথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন, এবার ফের সরকারের প্রতিশ্রুতি স্মরণ করিয়ে দিতে এগিয়ে এসেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি শুধু একটি সামাজিক পোস্ট নয়—বরং ভবিষ্যতের রাজনৈতিক আন্দোলনের সুর বেঁধে দেওয়ার একটি কৌশলিক বার্তা।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের ধারণা, এবারও যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঘোষণা না আসে, তবে মে-জুনে রাজপথে ফের নতুন ঢেউ দেখা যেতে পারে। আর এবার আন্দোলন শুধু সরকারের প্রতি অনাস্থাই নয়, বরং বাস্তবায়নযোগ্য পরিবর্তনের জন্যও চাপ সৃষ্টি করবে।
নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলে কী হবে? ছাত্র-জনতা আবার রাস্তায় নামবে নাকি সরকার কোনো বিকল্প ব্যাখ্যা দাঁড় করাবে? ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ একদিকে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির প্রতীক, অন্যদিকে একটি প্রজন্মের ভবিষ্যতের দাবিও। এখন সময় বলবে—সরকার কথা রাখে কিনা।