যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (NCA) সম্প্রতি সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান ও ভাতিজা আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের মালিকানাধীন লন্ডনের বিলাসবহুল সম্পত্তিগুলোর বিরুদ্ধে ফ্রিজিং অর্ডার জারি করেছে। এই সম্পত্তিগুলোর মূল্য প্রায় ৯০ মিলিয়ন পাউন্ড, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১,৪৭৯ কোটি টাকা।

Source: Ittefaq | 23 May 2025 | Pic: Collected
সালমান এফ রহমান, যিনি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন এবং বেক্সিমকো গ্রুপের সহ-সভাপতি, বর্তমানে বাংলাদেশে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে কারাবন্দি রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা ব্যাংক ঋণ ও শেয়ার বাজারে অনিয়মের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন এবং সেই অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন।
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (ACC) ও অন্যান্য সংস্থা তদন্তে জানতে পেরেছে, এই অর্থের একটি বড় অংশ যুক্তরাজ্যে বিলাসবহুল সম্পত্তি কেনার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। এই সম্পত্তিগুলোর মধ্যে লন্ডনের গ্রোসভেনর স্কোয়ার ও গ্রেশাম গার্ডেনসে অবস্থিত অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে, যেগুলো অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে কেনা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক তদন্ত ও আইনি পদক্ষেপ
NCA এর ফ্রিজিং অর্ডারের ফলে আহমেদ শায়ান ও আহমেদ শাহরিয়ার রহমান এই সম্পত্তিগুলো বিক্রি বা হস্তান্তর করতে পারবেন না। এই পদক্ষেপটি দ্য গার্ডিয়ান ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের যৌথ তদন্তের পর নেওয়া হয়েছে, যেখানে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের মালিকানাধীন যুক্তরাজ্যের সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৪০০ মিলিয়ন পাউন্ড বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের একটি আদালতও ACC কে নির্দেশ দিয়েছে, আহমেদ শায়ান ও আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের যুক্তরাজ্যের স্থাবর সম্পত্তি জব্দ করতে। এছাড়া, তাদের বার্কলেস ব্যাংকের দুটি অ্যাকাউন্ট এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি কোম্পানির শেয়ারও ফ্রিজ করা হয়েছে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও প্রতিক্রিয়া
২০২৪ সালে বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে, সালমান এফ রহমান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে তদন্ত জোরদার হয়েছে। তবে, আহমেদ শায়ান রহমানের মুখপাত্র বলেছেন, তাদের মক্কেল কোনো অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না এবং যুক্তরাজ্যের যেকোনো তদন্তে সহযোগিতা করবেন।
বাংলাদেশের জন্য বার্তা
এই ঘটনা বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রবাসে পাচার হওয়া অর্থ ও সম্পত্তি পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা বাড়ছে। এটি দেশের সাধারণ জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সহায়ক হতে পারে।
এই তদন্তের অগ্রগতি ও পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য আমাদের সবার নজর রাখা উচিত। দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
সম্পত্তি জব্দের মূল তথ্য:
- মূল্য: প্রায় ৯০ মিলিয়ন পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১,৪৭৯ কোটি টাকা)
- অবস্থান: লন্ডনের গ্রোসভেনর স্কোয়ার ও গ্রেশাম গার্ডেনস
- মালিকানাধীন: আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান ও আহমেদ শাহরিয়ার রহমান
- অফশোর কোম্পানি: ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, আইল অব ম্যান ও জার্সি ভিত্তিক কোম্পানির মাধ্যমে কেনা
- ফ্রিজিং অর্ডার: যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (NCA) দ্বারা জারি
- বাংলাদেশে তদন্ত: দুর্নীতি দমন কমিশন (ACC), CID ও BFIU কর্তৃক পরিচালিত
- অতিরিক্ত পদক্ষেপ: বার্কলেস ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কোম্পানির শেয়ার ফ্রিজ
- আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: দ্য গার্ডিয়ান ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের যৌথ তদন্ত
এই ঘটনাটি বাংলাদেশের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে পারে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রবাসে পাচার হওয়া অর্থ ও সম্পত্তি পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা বাড়ছে। এটি দেশের সাধারণ জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সহায়ক হতে পারে।