দীর্ঘ ১২ বছরের আইনি লড়াইয়ের পর আজ, ১ জুন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক নিবন্ধন ও ঐতিহ্যবাহী ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক ফিরে পাওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করবে। এই রায় শুধু জামায়াতের ভবিষ্যৎ নয়, দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।

Source: Somoy Tv | 31 May 2025 | Pic: Collected
২০০৯ সালে ২৫ জন নাগরিক হাইকোর্টে রিট করে জামায়াতের নিবন্ধন বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেন। ২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে রায় দিয়ে বলে—বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের যোগ্য নয় এবং নির্বাচন কমিশনের দেওয়া নিবন্ধন অবৈধ। এরপর ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন প্রজ্ঞাপন জারি করে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে।
জামায়াত হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর দলটির করা আপিল ও লিভ টু আপিল খারিজ করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। পরে দেরি মার্জনা করে আপিল ও লিভ টু আপিল পুনরুজ্জীবিত চেয়ে দলটির পক্ষ থেকে পৃথক আবেদন করা হয়। শুনানি নিয়ে ২০২৩ সালের ২২ অক্টোবর আপিল বিভাগ আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন। এরপর জামায়াতের আপিল ও লিভ টু আপিল শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ওঠে। গত ৩ ডিসেম্বর শুনানি শুরু হয়।
জামায়াত অতীতে ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক ব্যবহার করত। কিন্তু ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের ফুল কোর্ট সভায় গৃহীত একটি রেজল্যুশনের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে বলা হয়—দাঁড়িপাল্লা কেবলমাত্র ‘ন্যায়বিচারের প্রতীক’ হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের মনোগ্রামে ব্যবহৃত হবে এবং অন্য কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি এই প্রতীক ব্যবহার করতে পারবে না। জামায়াতের আইনজীবীরা যুক্তি দিয়েছেন, যেহেতু আপিল বিচারাধীন অবস্থায় রেজল্যুশন পাস করা হয়েছে, তাই এটি অপ্রাসঙ্গিক বা পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে।
জামায়াত ইতিমধ্যে প্রায় ৩০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। তবে নিবন্ধন ও প্রতীকহীন অবস্থায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে দলটির ভেতরে অনিশ্চয়তা ও হতাশা তৈরি হয়েছে। দলটির শীর্ষ নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তির বিষয়েও এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি। দলটির আইনজীবীরা বলছেন, এই দুটি বিষয়ে আইনি লড়াই অব্যাহত রয়েছে এবং তারা আশাবাদী যে আদালতের মাধ্যমে ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে।
আজকের রায় শুধু জামায়াতের জন্য নয়, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। যদি জামায়াত নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পায়, তবে তারা পূর্ণাঙ্গভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে। অন্যথায়, দলটি নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।