সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশে ফেরা ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হলেও, তাকে গ্রেপ্তার না করার বিষয়ে সরকারের অবস্থান একেবারেই স্পষ্ট। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানালেন, “তার বিরুদ্ধে কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নেই। ফলে তাকে গ্রেপ্তার করার প্রশ্নই উঠে না।”

Source: Ittefaq | 9 June 2025 | Pic: Collected
তিনি আরও বলেন, দেশের আইন অনুযায়ী তদন্ত চলছে। কোনো অপরাধ প্রমাণিত হলে, যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই মন্তব্য আসে সোমবার সকালে যাত্রাবাড়ী থানায় উপদেষ্টার পরিদর্শনের সময়। তখন তিনি গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবং ঘটনার আইনগত দিক নিয়ে স্বচ্ছ বার্তা দেন।
গত রোববার গভীর রাতে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে আবদুল হামিদ ঢাকায় অবতরণ করেন। এরপরই তাকে কিশোরগঞ্জে নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। ঠিক এই সময় থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে নানা গুজব—“তাকে কেন গ্রেপ্তার করা হলো না?”
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, যারা এমন গুজব ছড়াচ্ছে, তারা যেন আইন ও বিচার ব্যবস্থাকে অবজ্ঞা না করে। কারণ গ্রেপ্তার বা অন্য কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশ ও আইন অনুসরণ বাধ্যতামূলক।
পুলিশ সদর দপ্তর ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, যারা ৩ দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেবে। অভিযোগ সত্য হলে, উপযুক্ত শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও নিশ্চিত করা হয়।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। যদি কোনো ধরনের গাফিলতি বা আইন লঙ্ঘন হয়, সেটি বরদাস্ত করা হবে না।”
গণ অধিকার পরিষদসহ একাধিক সংগঠন ও রাজনৈতিক নেতা এই ঘটনা নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ উপদেষ্টার পদত্যাগও দাবি করেছেন। এর পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব বা বিশেষ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগও এসেছে।
তবে বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন, এটি পুরোপুরি একটি আইনি প্রক্রিয়ার বিষয়। যতক্ষণ না কোনো আদালত গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়, সরকার এ বিষয়ে কোনো একতরফা পদক্ষেপ নিতে পারে না।
সাবেক রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলার অভিযোগ থাকলেও, সেটি এখনও তদন্তাধীন। এর ভিত্তিতে কোনো ওয়ারেন্ট না থাকায় তাকে আটকের প্রশ্নই উঠছে না—এমনটাই বলছে প্রশাসন।
আবদুল হামিদকে ঘিরে রাজনৈতিক উত্তেজনা যতই থাকুক, সরকারের বক্তব্য স্পষ্ট—“আইনের বাইরে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে না।” তবে এই অবস্থান কতটা আইননির্ভর, আর কতটা রাজনৈতিক কৌশলের অংশ, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
জনগণের চোখ এখন তদন্ত কমিটির রিপোর্টের দিকে। সত্য উদঘাটন ও আইনের শাসন নিশ্চিত করার মাধ্যমে সরকার কতটা নিরপেক্ষ থাকতে পারে, সেটাই দেখার বিষয়।