গত সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শুনানি অনুষ্ঠিত হয় যেখানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ন ঘোষণা দেয়া হয়। বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এই তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালের শুনানিতে প্রসিকিউশন পক্ষ জানায়, আসামিরা সাত কার্যদিবসের মধ্যে আদালতে হাজির না হলে তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার কার্যক্রম শুরু করা হবে।

Source: BBC | 16 June 2025 | Pic: Collected
ট্রাইব্যুনালে পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা এবং আসাদুজ্জামান খান গ্রেফতার এড়াতে ভারতে পলাতক অবস্থায় রয়েছেন। চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম শুনানিতে জানান, “পুলিশ বিভিন্ন সময় তাদের বাসস্থানে অভিযান চালিয়েও গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং সংবাদপত্রের রিপোর্ট থেকে জানা গেছে তারা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন।”
মামলার অন্যতম আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ৬ আগস্ট থেকে অজ্ঞাত স্থানে পলাতক আছেন। এছাড়া, গত ১৩ অক্টোবর তিনি ভারতে পলাতক রয়েছেন বলে জানা গেছে। এই মামলায় গ্রেফতার হওয়া একমাত্র আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে আদালতে হাজির করা হয়েছে।
আদালত সাত দিনের মধ্যে আসামিদের হাজির হওয়ার জন্য দুইটি জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে হাজিরা না দিলে তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার শুরু হবে বলে চিফ প্রসিকিউটর জানিয়ে দিয়েছেন।
এই মামলা জুলাই-অগাস্টের গণআন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিষয়। তদন্ত সংস্থা অভিযোগে উল্লেখ করেছে, শেখ হাসিনা “মাস্টারমাইন্ড, হুকুমদাতা ও সুপিরিয়র কমান্ডার” হিসেবে অপরাধের মূল সংগঠক। ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে ১৪ হাজার ছাত্র-জনতার হত্যাকাণ্ড এবং ২৫ হাজার মানুষের আহত হওয়ার দায় তাদের উপর চাপানো হয়েছে।
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেছেন, “এই বিচার শুধুমাত্র অতীতের প্রতিশোধ নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য প্রতিজ্ঞা।” এই মামলায় ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার বিশদ তদন্ত প্রতিবেদন, অডিও-ভিডিও প্রমাণ, গণমাধ্যম প্রতিবেদনসহ ৮১ জন সাক্ষী দাখিল করা হয়েছে।
প্রসিকিউশন পক্ষের মতে, শেখ হাসিনার নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ সংঘবদ্ধভাবে হত্যাকাণ্ড এবং আন্দোলন দমন করেছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে মরনঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের প্রমাণও পাওয়া গেছে।
গত বছরের ৫ আগস্টের গণবিক্ষোভের পর সরকারের পতনের পর পুনর্গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই মামলাটি শুরু করে। এই ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত আইনজীবী তাজুল ইসলাম, যিনি একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের সময় জামায়াত নেতাদের আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এই মামলা ছাড়াও আরও দুটি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগ শাসনামলের সময় গুম-খুনের অভিযোগ এবং ২০১৩ সালের মতিঝিল শাপলা চত্বরের হেফাজত ইসলামের সমাবেশে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের মামলা।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পরবর্তী শুনানি ২৪ জুন নির্ধারিত। সেই দিন আসামিরা আদালতে উপস্থিত না হলে আইন অনুযায়ী তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার শুরু হবে।