জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় বিএনপি প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদসীমা ১০ বছর পর্যন্ত (দুই মেয়াদ) শর্তসাপেক্ষে মেনে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে । দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়—এক ব্যক্তি দুই মেয়াদ বা সর্বোচ্চ দশ বছর প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন, তবে এ সিদ্ধান্ত ‘সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কাউন্সিল’ বাতিল করা হলে তবেই এর বাস্তবায়ন হবে ।

Source: BBC Bangla | 26 June 2025 | Pic: Collected
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “নিয়োগ কাউন্সিলে প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতির গুরুত্ব সংকুচিত হবে, এতে নির্বাহী ক্ষমতা দুর্বল হবে”—এই কারণেই বিএনপি এই এলাকাকে একান্তভাবে গ্রহণযোগ্য মনে করছে না ।
খুব সম্প্রতি ঐকমত্য কমিশন ‘ন্যাশনাল কনস্টিটিউশনাল কাউন্সিল’ (NCC)-এর জায়গায় বদলে এনে প্রস্তাব দিয়েছে একটি ‘সংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি’। যেটিতে পার্লামেন্টে নির্বাচিত স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি ও প্রধান বিচারপতির মনোনীত ব্যক্তি থাকবেন—এমনকি প্রধানমন্ত্রীরও অন্তর্ভুক্তি রয়েছে । তবে বিএনপি এ ধরনের গঠনের বিরুদ্ধে আছে এবং এসব পদক্ষেপকে শর্তসাপেক্ষে প্রধানমন্ত্রী মেয়াদ মেনে নেওয়ার শর্ত হিসেবে দেখছে ।
রিপোর্ট অনুসারে, জামায়াত, এনসিপিসহ ইসলামপন্থি ও বামপন্থি কিছু দল ১০ বছরের মেয়াদসীমার প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছে, তবে তারা নিয়োগ কাউন্সিলের প্রস্তাবে বিপ্রতীপ অবস্থান তুলে ধরেছে । এদিকে, বিএনপির অবস্থানেও সরল সমঝোতা হয়নি—তারা মনে করছে, “নির্বাহী ক্ষমতা শক্তিশালী থাকা আবশ্যক, যা এই নিয়োগ কাঠামো সংকুচিত করবে”।
আইনপ্রয়োগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পার্লামেন্টারি গণতন্ত্রে সুনির্দিষ্ট মেয়াদ নির্ধারণ না থাকলে একনায়কতন্ত্রের আশঙ্কা থাকে না; যেমন যুক্তরাজ্য ও ভারতের অভিজ্ঞতা। তবে রাষ্ট্রপত্রীয় ব্যবস্থায় মেয়াদসীমা থাকা স্বাভাবিক । রাশিয়াতে দুই মেয়াদ পর বিরতির পর পুনরায় ক্ষমতা চলে আসার উদাহরণ দেখিয়ে বিশ্লেষকরা মনে করাচ্ছেন, “কাগজে-বলে ক্ষমতা সীমাবদ্ধ করে দিলেই তা প্রতিরোধ হবেই না”—তাই বিএনপি নিয়োগের কাঠামো থেকে ক্ষমতা সংরক্ষিত না হলে মেয়াদ সীমা মানবে না বলে অবস্থান দখল করেছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান আলী রিয়াজ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “বিএনপি মেয়াদমিলে আগ্রহী, তবে ক্ষমতা সংরক্ষণে নিয়োগ কাঠামো গুরুত্বপূর্ণ”—এই দুই জটিল প্রশ্নে চূড়ান্ত সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা কঠিন । কমিশন ১০ জুলাইয়ের মধ্যেই জুলাই সনদ চূড়ান্ত করার চেষ্টা করছে—তবে নিয়োগ কাঠামো ও সংবিধানের মৌলিক প্রস্তাব নিয়ে বিরোধ আরেকধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে।