তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্পে নতুন যুগের সূচনা করেছে দেশটির শীর্ষ প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আসেলসান (ASELSAN)। প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি সফলভাবে পরীক্ষা করেছে তাদের উন্নতমানের YILDIRIM-100 DIRCM (Directed Infrared Countermeasure) লেজার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এটি এমন একটি লেজার-চালিত প্রযুক্তি, যা ইনফ্রারেড-নির্দেশিত বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রকে শনাক্ত করে সেগুলোর দিক পরিবর্তন কিংবা ধ্বংস করতে সক্ষম। Defence Industry Europe ও Turkiye Today জানায়, সফল পরীক্ষায় দেখা গেছে YILDIRIM-100 ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের ঠিক পরেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে সক্রিয় হয়ে শক্তিশালী লেজার রশ্মি ছুড়ে ক্ষেপণাস্ত্রের গাইডিং সিস্টেমকে ধ্বংস করে দিতে পারে। এতে ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে পড়ে এবং নির্ধারিত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে ব্যর্থ হয়।

7 July 2025 | Pic: Collected
এই লেজার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার ও ড্রোনের জন্য। এটি একটি মাল্টি-সেন্সর কনফিগারেশনের মাধ্যমে কাজ করে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে ৩৬০ ডিগ্রি এলাকায় নজরদারি চালাতে পারে। ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এটি হুমকি মোকাবেলায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়। আসেলসানের প্রকাশিত পরীক্ষামূলক ভিডিওতেও দেখা গেছে, সিস্টেমটি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আক্রমণকারী ক্ষেপণাস্ত্রকে ট্র্যাক করে এবং নির্ভুলভাবে তার “seeker head” ধ্বংস করে দেয়। ফলে আকাশপথে চলমান যেকোনো প্ল্যাটফর্মের জন্য এটি একটি কার্যকর নিরাপত্তা বেষ্টনী গঠন করে।
আসেলসানের কর্মকর্তারা বলছেন, YILDIRIM-100 ভবিষ্যতের যুদ্ধক্ষেত্রে একটি “গেম চেঞ্জার” প্রযুক্তি হয়ে উঠবে। এটি শুধুমাত্র প্রতিরক্ষা নয়, বরং আক্রমণাত্মক হামলার বিরুদ্ধে দেশের বিমান নিরাপত্তা কাঠামোকেও ঢেলে সাজাতে সক্ষম হবে। তুরস্কের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির এই অগ্রগতি আন্তর্জাতিকভাবে নজর কেড়েছে। বর্তমানে যুক্তরাজ্যও তাদের ড্রাগনফায়ার লেজার অস্ত্র সিস্টেম (Dragonfire LDEW) উন্নয়নে মনোযোগ দিচ্ছে, যার মাধ্যমে স্পষ্ট হচ্ছে – লেজার প্রযুক্তিই হতে যাচ্ছে আধুনিক যুদ্ধের ভবিষ্যৎ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই প্রযুক্তির সফল বাস্তবায়নের ফলে তুরস্ক নিজস্ব প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনে আরো স্বনির্ভর হয়ে উঠবে। এতে কেবলমাত্র দেশের সামরিক সক্ষমতা নয়, বরং বৈশ্বিক অস্ত্র রপ্তানি বাজারেও দেশটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে।