বৃহস্পতিবার বিকালেই সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে একটি “ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কমিশন” গঠনের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে, পাশাপাশি দেড় দশক ধরে কার্যকর না হওয়া বাংলাদেশ-পাকিস্তান “জয়েন্ট ইকোনমিক কমিশন” (JEC) পুনরায় সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খানের সাথে রাষ্ট্রীয় বৈঠকের পরে।

22 August 2025 | Pic: Collected
উপদেষ্টার ভাষ্য অনুযায়ী, “দুই দেশ যৌথভাবে বা বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে ইন্টারমিডিয়েট পণ্য উৎপাদন করতে পারে, যা উভয় পক্ষের জন্য লাভজনক”, এমনকি বাংলাদেশ পাকিস্তানে রপ্তানিতে এক কোটি কেজি চা ডিউটি ফ্রি ইস্যু পুনঃলার্জ করার আবেদন করা হয়েছে; এছাড়া হাইড্রোজেন পার অক্সাইডে অ্যান্টি-ডাম্পিং ডিউটি প্রত্যাহার, চামড়া ও চিনি শিল্পে সহায়তা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনাও হয়েছে ।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, গত দেড় দশকে দুই দেশের বাণিজ্য খুবই কম ছিল; খাদ্য ও পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য আমরা বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করিl তবে পাকিস্তান থেকে সঠিক প্রতিযোগিতামূলক দামে এনে রপ্তানি-আমদানি জোরদার করা যেতে পারে, যা জাতীয় অর্থনীতির জন্য সাফল্যময় হবে।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য উপদেষ্টা স্পষ্ট করে বলেন, “আমরা সবার দিকে ঝুঁকছি—পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত—কিন্তু সবসময় দেশের স্বার্থই প্রথমে বিবেচনা করি”, যা এই উদ্যোগের বহুমাত্রিক ও সর্বোপরি জাতীয় স্বার্থ নির্ধারণী মনোভাবকে প্রতিফলিত করে ।
ঢাকার বৈঠকের পর চট্টগ্রামে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের সাথে ভিউ-শেয়ারিং সভায় বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন নিশ্চিত করেন, একটি ‘কমপ্রিহেনসিভ রোডম্যাপ প্রস্তুত করার জন্য JWG (Joint Working Group) গঠন করা হবে**, যা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বিস্তারে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করবে।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, এই সিদ্ধান্ত দুটি দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করবে—বিশেষ করে যেসব সময় অঞ্চলীয় বাণিজ্য প্রক্রিয়ায় JEC অনেকদিন নিষ্ক্রিয় ছিল; অর্থাৎ, দীর্ঘদিনের থিতিয়ে থাকা আবহ থেকে বেরিয়ে এসে ‘নতুন অঙ্গীকার’ প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গক্রমে, AP’র একটি প্রতিবেদন মতে, দুই দেশ ১৫ বছরের বিরতির পর কূটনৈতিক আলোচনা পুনরায় শুরু করেছে, যা পূর্বে স্থিতিশীল রূপ ধারণ করেছিল রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে; বর্তমান উদ্যোগ সেই ধারাকে অব্যাহত রাখছে, এবং বাণিজ্য, কৃষি, অন্যান্য খাতে সহযোগিতাও নিয়ে আলোচনা চলছে ।
বর্তমানে বাংলাদেশের ১২৩ বিলিয়ন ডলারের আমদানি, যার মধ্যে ১৫ বিলিয়ন ডলার ফুড ও ইন্টারমিডিয়েট পণ্যে; এই পরিপ্রেক্ষিতে দুই দেশের বাণিজ্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা বিশাল—যেমন চিনি, ফল, চামড়া, ওষুধ, টেক্সটাইল ইত্যাদি।
আর্থ-নীতির দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায়, পাকিস্তান-বাংলাদেশ ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (FTA) আলোচনা রয়েছে—যা যদি বাস্তবায়িত হয়, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে নাটকীয় বৃদ্ধি আনতে পারে; ইতিমধ্যে ২০২৪ সালে সরাসরি কার্গো রুটও পুনরায় চালু হয়েছে দুই দেশের মাঝে ।
সারসংক্ষেপে বলতে গেলে, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের ঘোষণার মাধ্যমে পরিষ্কার হয় যে বাংলাদেশের নীতি “বাণিজ্য প্রবাহ জোরদার”—এর অংশ হিসেবে:
- আগামীতে ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কমিশন গঠন,
- দীর্ঘস্থায়ী নির্জীব JEC পুনরুজ্জীবিত করা,
- নির্দিষ্ট পণ্যে ডিউটি ইস্যু সমাধান,
- মধ্যবর্তী পণ্য ও নির্ভরযোগ্য উৎপাদনে যৌথ বিনিয়োগ,
- সহজতর আমদানি-রপ্তানি সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য পুনর্গঠন।
এই উদ্যোগ শুধু অর্থনৈতিক মূল্য নয়, বরং গোটা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের স্থিতিশীলতা, আস্থা, এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক ভর উন্নয়নের দৃঢ় ভিত্তিই স্থাপন করবে।