অনেক গবেষণা বলছে সঠিক খাদ্যাভ্যাস যদি আমরা মাঝবয়স থেকেই অনুসরণ করি, তবে ডায়েটের বদলে টাইম-মেশিনের মতো কাজ করবে—৭০ বছর বয়সেও আমরা তরুণ, সুস্থ ও স্মরণশক্তিসম্পন্ন থাকতে পারি। উদাহরণ হিসেবে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, যারা AHEI ডায়েট (Alternative Healthy Eating Index) অনুসরণ করেছেন—তাদের ৭০ বছর বয়সে সুস্থভাবে বাঁচার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি; অন্য ডায়েটের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে তারা দু’গুণ স্বাস্থ্যবান এবং দীর্ঘ জীবনের পথে ছিলেন। AHEI ডায়েটের মূল উপাদানগুলো হলো: প্রচুর ফল-মূল, সবজি, পূর্ণ শস্য, বাদাম ও ডাল, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট—সাথে মাংস, চিনিযুক্ত পানীয় ও প্রক্রিয়াজাত খাবারগুলো কম খাওয়া।

31 August 2025 | Pic: Collected
স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেট নির্বাচন করাও গুরুত্বপূর্ণ। তুফস ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মাঝবয়সে যারা ডাল, বerries, সবজি, পুরো শস্য, ওটস জাতীয় উচ্চ-মানের কার্ব খেয়েছেন, তারা ৭০ বছর বয়সে দীর্ঘস্থায়ী রোগ বা মানসিক/শারীরিক দুর্বলতা ছাড়াই থাকতে পেরেছেন।
ফ্ল্যাভোনয়েড সমৃদ্ধ খাবার—যেমন: বেরি, আপেল, কমলা, সেলারি, কেল—সেগুলো স্নায়বিক দুর্বলতা, শারীরিক দূর্বলতা কমাতে, মানসিক ও শারীরিক ক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে; বিশেষ করে নারীদের জন্য উপকারী। প্রতিদিন তিনটি ফ্ল্যাভোনয়েড সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার ফলে বয়সজনিত সমস্যা মোকাবিলায় ঝুঁকি ১৫% পর্যন্ত কমে ।
প্ল্যান্ট-ভিত্তিক ডায়েট, বিশেষ করে Mediterranean বা Blue Zones ডায়েট, সুস্থ বয়স্কতা ও দীর্ঘজীবনের সাথে জড়িত। Blue Zones অঞ্চলে (যেমন: ইকারিয়া, নিকয়া, অকিনাওয়া) লোকেরা প্রচুর পাতা সবজি, ডাল, বাদাম, শস্য, সামান্য মাছ বা দুধ গ্রহণ করেন, এবং এর ফল—অত্যন্ত দীর্ঘায়ু এবং কম রোগ-জটিলতা । Mediterranean ডায়েটও একই নীতি অনুসরণ করে—অলিভ অয়েল, ফ্যাটি ফিশ, বাদাম ও উদ্ভিজ্জ খাদ্যে উৎস উৎসাহ দেওয়া হয় ।
সুরক্ষিত চামড়া ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষার জন্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট-সমৃদ্ধ খাবার যেমন: অলিভ অয়েল, হরি চা, ফ্যাটি ফিশ, গাঢ় চকলেট (৫৫–৭০% কোকো), এবং বেশী রঙিন সবজি গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো শরীরের ফ্রি র্যাডিক্যালের ক্ষতি কমিয়ে দেয়, ত্বকের পটলতা ও স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতে সাহায্য করে ।
World Health Organization (WHO) যত সহজ নিয়ম দিয়েছে, সেগুলো যদি পালন করা যায় তো জীবন দীর্ঘমেয়াদি, স্বাভাবিক ও রোগমুক্ত থাকে:
- প্রতিদিন ৪০০ গ্রাম ফল ও সবজি খাওয়া (স্টার্চি রুট),
- ফাট (স্যাচুরেটেড) ৩০% বা তার কম রাখা,
- লেগুম, পুর্ন শস্য, বাদাম নিয়মিত রাখা,
- চিনি ও লবণ কম রাখা ।
সব মিলিয়ে, ৭০ বছর বয়সে “তরুণ” এবং সুস্থ থাকতে চাইলে খাবার নির্বাচন হয়ে ওঠে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার:
- সবুজ পাতাযুক্ত সবজি (কেল, পালং, চার্ড) — বিপাক, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং হৃদযন্ত্রের জন্য সুস্থতা দেয় ।
- ফল (বিশেষ করে রঙিন ও পুরো ফল) — হৃদরোগ ও ক্যান্সার ঝুঁকি কমায়।
- পুর্ন শস্য (জোয়ার, ওটস, বারলি, বাদামিতে রুট) — দীর্ঘস্থায়ী শক্তি, ফাইবার ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট।
- ডাল ও বাদাম — প্রোটিন ও ফাইবারের উৎস, শর্করা নিয়ন্ত্রণ ও পেশি রক্ষা করে।
- স্বাস্থ্যকর ফ্যাট (অলিভ অয়েল, অ্যাভোকাডো, ফ্যাটি মাছ) — প্রজ্বলন কমায়, মস্তিষ্ক ও হৃদয়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করে ।
- ফ্ল্যাভোনয়েড ও পলিফেনল (বেরি, টিন্ড, চকলেট, চা) — বয়সজনিত অনেক সমস্যা প্রতিরোধ করে ।
এই ধরনের খাদ্যাভ্যাস শুধু দীর্ঘ জীবনই দেয় না, বরং মানসিক, শারীরিক ও সামাজিক স্বাস্থ্যের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করে। তাই আজ থেকেই শুরু করুন এসব সহজ, সহজলভ্য ও বিজ্ঞানসম্মত খাবার নিয়মিত ভোজে রাখার অভ্যাস—নতুন পথ নয়, নিজেকে আজই তাজা করে তুলুন, যাতে ৭০, ৮০ কিংবা তার পরেও আপনি নিজেকে “তরুণ” বলতে পারেন।