২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে মার্কিন ফেডারেল আদালতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিট্রাস্ট মামলার রায়ে গুগল-পিতা সংস্থা অ্যালফাবেট স্বস্তি পেয়েছে, যখন বিচারক অমিত মেহতা কোম্পানিকে ভাঙার নির্দেশ দেননি এবং একইসঙ্গে নির্দেশ দিয়েছেন যে ক্রোম ব্রাউজার এবং অ্যান্ড্রয়ড অপারেটিং সিস্টেমের নিয়ন্ত্রণ অ্যালফাবেটের কাছে থাকবে, যা প্রযুক্তি খাতে বিশাল প্রভাব ফেলে এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য ইতিবাচক বার্তা দেয়। আদালত আরও নির্ধারণ করেছেন যে গুগল exclusive search deals আর করতে পারবে না এবং সার্চ-ইন্ডেক্স ও ব্যবহারকারীর ডেটা প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে ভাগ করতে হবে, যেমন OpenAI ও Perplexity-এর মতো AI-ভিত্তিক নতুন সার্চ প্ল্যাটফর্মগুলিকে বাজারে সুযোগ দেওয়া হবে।

3 September 2025 | Pic: Collected
এই সিদ্ধান্তের পর অ্যালফাবেটের শেয়ার প্রি-মার্কেটে প্রায় ৬–৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং Apple-এর শেয়ারও কয়েক শতাংশ উপরে উঠে, কারণ কোম্পানি এখনও Apple-এর সাথে ডিফল্ট সার্চ চুক্তি বজায় রাখতে পারছে। বিশ্লেষকরা এই রায়কে “স্থিতাবস্থার পুনরুদ্ধার” বা ‘a home run for the status quo’ হিসেবে বর্ণনা করছেন, কারণ গুগলকে দোষী সাব্যস্ত করেও তা বাজারে ভারসাম্য বজায় রেখেছে এবং কোম্পানির জন্য বিশেষভাবে লাভজনক হয়েছে। বিচারক মেহতা এই রায়ে AI-এর উদ্ভাবনের প্রভাবকেও গুরুত্ব দিয়ে উল্লেখ করেছেন, “Generative AI-এর উদ্ভব এবং প্রতিযোগিতা এমনকি আদালতের সিদ্ধান্তের দিকনির্দেশক হিসেবে কাজ করেছে,” যা দেখায় যে প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তন আদালতের বিচারেও প্রভাব ফেলছে। এই রায় থেকে বোঝা যায়, বড় প্রযুক্তি কোম্পানির বাজারে প্রভাব থাকা সত্ত্বেও আদালত এমন নিয়ন্ত্রণমূলক, কিন্তু ভারসাম্যপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে যা কোম্পানির ব্যবসা ও বিনিয়োগকারীর স্বার্থ দুটোই রক্ষা করে।
গুগল অবশ্য এই রায়কে আপিলের সম্ভাবনা হিসাবে দেখছে, এবং তাদের পক্ষ থেকে আপিলের প্রস্তুতি চলছে। এটি বছরের মধ্যে বা পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। বিচারক এই রায়ে বাজারের প্রতিযোগিতার ভারসাম্য এবং AI-চালিত প্রতিদ্বন্দ্বীদের সুযোগ তৈরি করতে নির্দেশ দিয়েছেন। রায়ে বিশেষভাবে উল্লেখ আছে যে AI ভিত্তিক প্রতিযোগিতা ইতিমধ্যেই বাজারে শক্তিশালী হয়েছে, যা গুগলকে একচেটিয়াভাবে প্রভাব বিস্তার করতে বাধা দিচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, “যদি রায় কঠোর হতো, তাহলে গুগলকে ভাঙতে হতো, যা বাজারে বিশাল ধাক্কা হতো; কিন্তু এই মাঝারি রায় অ্যালফাবেটকে শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রভাব উপহার দিয়েছে।”
শেয়ারবাজারে এই রায়ের প্রভাব স্পষ্ট—বিনিয়োগকারীরা স্বস্তি পেয়েছেন, এবং অ্যালফাবেটের শেয়ারের মূল্য উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এই রায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে সক্ষম হয়েছে, কারণ কোম্পানি এখনও তার প্রধান ব্যবসায়িক সম্পদ যেমন ক্রোম, অ্যান্ড্রয়ড এবং সার্চ-এ প্রভাব বজায় রাখতে পারছে। একইসাথে, ডেটা ভাগ করার নির্দেশ প্রতিযোগীদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করেছে, যা AI এবং প্রযুক্তি খাতের ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতার জন্য ইতিবাচক সংকেত। আদালতের সিদ্ধান্ত প্রমাণ করেছে যে বড় প্রযুক্তি সংস্থাগুলো বাজারে প্রভাব বিস্তার করতে পারে, কিন্তু তারা প্রতিযোগিতার সুযোগও নিশ্চিত করতে বাধ্য, যা বাজারের ভারসাম্য রক্ষা করে।
AI-এর উদ্ভাবনের কারণে এই মামলার ফলাফলে নতুন দিক এসেছে। Generative AI-এর উদ্ভাবন এবং বিভিন্ন নতুন সার্চ ও চ্যাট প্ল্যাটফর্মের বিকাশ বিচারককে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে বাজারে প্রতিযোগিতা যথেষ্ট শক্তিশালী। তাই, Google-এর একচেটিয়া প্রভাব ধরে রাখা বা কোম্পানিকে ভাঙা বাদ দেওয়া হয়েছে, যা বাজারে স্থিতিশীলতা নিয়ে এসেছে এবং বিনিয়োগকারীদেরকে স্বস্তি প্রদান করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, “বাজারের প্রতিক্রিয়া দেখে বোঝা যায় যে এই রায় অ্যালফাবেট এবং Google-এর শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।”
এই রায় শুধু অ্যালফাবেটের জন্য নয়, বরং মার্কিন প্রযুক্তি খাতের বড় খেলোয়াড়দের জন্যও নির্দেশমূলক, কারণ Meta, Amazon, Apple এবং অন্যান্য বড় প্রযুক্তি সংস্থার বিরুদ্ধে একই ধরনের অ্যান্টিট্রাস্ট মামলা চলছে। এই মামলার ফলাফল দেখাচ্ছে যে, আদালত মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর বাজারে প্রভাবকে সীমাবদ্ধ করতে চায়, কিন্তু একই সঙ্গে প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং প্রতিযোগিতার সুযোগও রাখতে চায়।
সর্বশেষে, এই রায়ের ফলে অ্যালফাবেটের শেয়ারবাজারে শক্তিশালী পুনরুদ্ধার ঘটেছে। বিনিয়োগকারীরা স্বস্তি পেয়েছেন এবং কোম্পানির ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা ও AI উদ্ভাবন নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়েছেন। এই রায় প্রমাণ করে যে, বড় প্রযুক্তি সংস্থার বাজার প্রভাব থাকলেও আদালত ভারসাম্যপূর্ণ নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সক্ষম, যা বাজারের স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা দুটোই রক্ষা করে।