ইন্ডিয়ার তেল আমদানি পরিকল্পনা বিপর্যস্ত, ট্রাম্পের নতুন শুল্কের চাপ

Date:

ইন্ডিয়ার রাশিয়ান তেলের লাভ ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতির কারণে প্রায় সম্পূর্ণভাবে মুছে গেছে। ইন্ডিয়া, যা দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়া থেকে সস্তা তেল আমদানি করে তার জ্বালানি খরচ হ্রাস করছিল এবং প্রায় ১৭ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করেছিল, এখন এই অর্থনৈতিক সুবিধা হারাচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসন ৫০% শুল্ক আরোপ করায় ইন্ডিয়ার আমদানি ব্যয় বেড়েছে এবং রপ্তানিত পণ্যের উপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন যে এই শুল্কের কারণে ইন্ডিয়ার রপ্তানি প্রায় ৪০% কমতে পারে, যা প্রায় ৩৭ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির সমান। এই পরিস্থিতি শুধু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই নয়, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও ইন্ডিয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তাঁর প্রশাসনের জন্য এটি একটি কঠিন সময়, কারণ দেশের অর্থনীতির উপর বৈশ্বিক চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ইন্ডিয়ার শ্রমঘন শিল্প যেমন টেক্সটাইল, রত্ন ও গয়না শিল্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশেষ করে এই খাতে লক্ষ লক্ষ কর্মসংস্থান ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে, ইন্ডিয়ার জিডিপি বৃদ্ধির হার ০.৮% হ্রাস পেতে পারে, যা দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে।

27 August 2025 | Pic: Collected


ইন্ডিয়ার রাশিয়া-তেল সম্পর্কও এই প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। রাশিয়া, ইন্ডিয়াকে তেল সরবরাহ অব্যাহত রাখতে আগ্রহী থাকলেও, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক এই চ্যালেঞ্জকে আরও জটিল করেছে। ইন্ডিয়ার জন্য এটি একটি নীতি সংক্রান্ত চাপও তৈরি করছে, কারণ তারা সাশ্রয়ী মূল্যের জ্বালানি চালিয়ে যেতে চায়, যা দেশের শিল্প এবং জ্বালানি খাতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক বাজারে এই শুল্কের প্রভাব দেখা দিয়েছে। অন্যান্য এশিয়ান দেশ এবং ব্রিকস দেশের মধ্যে জ্বালানি খাতে বিকল্প সরবরাহ ও সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই শুল্ক বৈশ্বিক শক্তির ভারসাম্যকে প্রভাবিত করতে পারে এবং ব্রিকস দেশগুলির মধ্যে আরও দৃঢ় সহযোগিতার পথ খুলে দিতে পারে।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই শুল্কের ফলে ইন্ডিয়ার বড় বড় কর্পোরেশনগুলোকে তাদের উৎপাদন এবং রপ্তানি কৌশল পুনঃপর্যালোচনা করতে হবে। টেক্সটাইল, রত্ন ও গয়না শিল্পের সঙ্গে সঙ্গে পেট্রোকেমিক্যাল খাতও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কোম্পানিগুলো এখন বিকল্প তেল সরবরাহকারী দেশগুলির দিকে নজর দিচ্ছে, কিন্তু রাশিয়ার সাশ্রয়ী মূল্যের তেলের বিকল্প খুঁজে পাওয়া সহজ নয়। ফলে, ইন্ডিয়ার জ্বালানি ব্যয় আরও বৃদ্ধি পেতে পারে এবং শিল্পগুলোর লাভের মার্জিন হ্রাস পাবে।

এই পরিস্থিতি রাজনৈতিক প্রভাবও তৈরি করছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তাঁর দলকে দেশীয় অর্থনীতির প্রভাব মোকাবেলা করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে, ইন্ডিয়া-আমেরিকা সম্পর্ক কিছুটা চ্যালেঞ্জপূর্ণ হয়ে উঠেছে। একদিকে ইন্ডিয়া রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী সহযোগিতা বজায় রাখতে চায়, অন্যদিকে আমেরিকার শুল্ক নীতি প্রভাব ফেলছে। এই দ্বন্দ্ব কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তে জটিলতা বাড়াচ্ছে।

ইন্ডিয়ার জন্য ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় জ্বালানি নিরাপত্তা এবং বৈকল্পিক তেল সরবরাহের বিকল্প গুরুত্ব পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইন্ডিয়াকে বহুজাতিক সরবরাহ চেইন এবং স্টকপাইল ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে। এছাড়া দেশীয় তেল উৎপাদন বাড়ানো এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানির দিকে মনোযোগ দেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ।

এছাড়া, রাশিয়ার সঙ্গে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর হতে পারে। আন্তর্জাতিক বাজারে এই শুল্কের প্রভাব অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশকেও প্রভাবিত করতে পারে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতিতে ব্রিকস দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং কৌশলগত জ্বালানি সমঝোতা আরও শক্তিশালী হবে। ফলে, ইন্ডিয়ার জন্য এটি চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ দুটোই নিয়ে এসেছে।

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Share post:

Subscribe

spot_imgspot_img

Popular

More like this
Related

বেআইনি নির্মাণের অভিযোগে GHMC নোটিশ পেলেন আল্লু অর্জুন

দক্ষিণ ভারতের জনপ্রিয় সুপারস্টার ও জাতীয় পুরস্কার জয়ী অভিনেতা...

নেপালে ব্যাপক বিক্ষোভের পর সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে সার্বিক নিরাপত্তা

নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধের প্রতিবাদে দেশব্যাপী সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায়...

কাতারে ইসরাইলি হামলা, বিশ্বজুড়ে তীব্র নিন্দা

ইসরাইলি হামলা কাতারে এক অভূতপূর্ব উত্তেজনার স্ফুরণ সৃষ্টি করেছে।...

নেপালে হোটেলে নেতা খুঁজতে এসে বাংলাদেশি ফুটবলার দেখে শান্ত বিক্ষুব্ধরা

নেপালের কাঠমান্ডুতে যখন চলছিল জেন জি বিরোধী প্রতিবাদ এবং...