নিউ ইয়র্ক সিটির ব্রুকলিনে রবিবার ভোরে ঘটে এক ভয়ঙ্কর ঘটনা। সময় তখন প্রায় সকাল ৫টা ৩০ মিনিট। স্থানীয় ৭৩তম থানার পেছনের প্রবেশদ্বার দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করছিলেন ৩৫ বছর বয়সী জাস্টিন কোলম্যান নামের এক ব্যক্তি, যার হাতে ছিল প্রায় ১৪ ইঞ্চি লম্বা একটি কসাইয়ের ছুরি। তাকে থামানোর চেষ্টা করেন দায়িত্বরত এক নারী পুলিশ কর্মকর্তা। তখনই হঠাৎ কোলম্যান ছুরি দিয়ে ওই নারী কর্মকর্তার মুখে আঘাত করেন।

8 September 2025 | Pic: Collected
NYPD কমিশনারের তথ্য অনুযায়ী, ওই কর্মকর্তা আঘাত ঠেকাতে হাত তুলেছিলেন, তবুও তার মুখ, মাথা এবং কানে গুরুতর ক্ষত হয়। জানা গেছে, তিনি দুইজন অভিজ্ঞ গোয়েন্দা কর্মকর্তার মেয়ে এবং দীর্ঘদিন ধরে সৎভাবে কর্তব্য পালন করছেন। হামলার পরপরই ঘটনাস্থলে থাকা অন্য পুলিশ সদস্যরা টেজার ব্যবহার করে হামলাকারীকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন, কিন্তু তিনি সেখান থেকে পালিয়ে যান। এরপর দুই ব্লক দূরে একটি আবাসিক ভবনের কাছে আবারও তাকে ঘিরে ফেলে পুলিশ। তখনও তাকে ছুরি ফেলে দিতে বলা হয়, কিন্তু তিনি তা মানেননি, বরং আচমকা পুলিশ সদস্যদের দিকে ছুটে আসেন। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ বাধ্য হয়ে তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। গুরুতর আহত অবস্থায় কোলম্যানকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার পর নিউ ইয়র্ক পুলিশ বেনিফিট অ্যাসোসিয়েশনের (PBA) সভাপতি প্যাট্রিক হেন্ড্রি আহত নারী কর্মকর্তাকে ‘হিরো’ আখ্যা দেন। তিনি বলেন, “এই সাহসী অফিসার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলেছেন। তার কারণে আরও অনেক বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব হয়েছে।” হামলাকারীর পরিচয় নিয়ে আরও তথ্য জানিয়েছে পুলিশ। জাস্টিন কোলম্যান আগে থেকেই সমস্যাজনক ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। গত এপ্রিল মাসে সহিংস আচরণের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল। প্রতিবেশীদের অনেকে তাকে মানসিকভাবে অস্থিতিশীল বলেও মন্তব্য করেছেন। ব্রুকলিনের স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ভোরবেলা এমন ভয়ঙ্কর দৃশ্য তারা আগে কখনও দেখেননি। শান্ত একটি এলাকায় হঠাৎ এই রক্তাক্ত ঘটনা সবাইকে আতঙ্কিত করেছে।
বর্তমানে আহত নারী কর্মকর্তার চিকিৎসা চলছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক নয় বলে নিশ্চিত করেছে চিকিৎসকরা। পুলিশ জানিয়েছে, এ ধরনের হামলা মেনে নেওয়া হবে না। যদি কেউ পুলিশের ওপর আঘাত চালায়, তবে তা আইনের আওতায় কঠোরভাবে প্রতিরোধ করা হবে। এই ঘটনায় পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে এবং কীভাবে কোলম্যান ছুরি নিয়ে থানা ভবনের ভেতরে ঢুকতে সক্ষম হলেন, সে বিষয়েও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। পুরো নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগ এখন ওই সাহসী নারী কর্মকর্তার পাশে দাঁড়িয়েছে এবং তাকে দ্রুত সুস্থ করে আবার দায়িত্বে ফেরানোর প্রত্যাশা করছে। ঘটনাটি একদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য সতর্কবার্তা, অন্যদিকে সাধারণ মানুষকেও মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, সন্ত্রাসী প্রবণতা বা হঠাৎ সহিংস আচরণের বিরুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।