ভারত-পাকিস্তান ও ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ পরিস্থিতির পর এবার যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির সুখবর দিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার মতে, ইসরাইল ও হামাসের মধ্যকার চলমান সংঘাত খুব শিগগিরই বন্ধ হতে পারে এবং মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
গত শুক্রবার (২৭ জুন) হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত একটি আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প জানান, গাজায় যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা এখন অনেকটা “কাছাকাছি” অবস্থায় রয়েছে। তিনি বলেন, “যারা সংঘাত বন্ধে কাজ করছেন, তাদের কয়েকজনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমি আশাবাদী, এটি দ্রুতই ঘটবে।”

Source: Jugantor | 28 June 2025 | Pic: Collected
যুদ্ধবিরতির বিষয়ে হামাসের পক্ষ থেকেও ইতিবাচক বার্তা পাওয়া গেছে। তারা জানায়, গাজায় যুদ্ধ থামাতে যে কোনো চুক্তির আওতায় তারা অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্ত করতে প্রস্তুত রয়েছে। এটি যুদ্ধের অবসানে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবেই দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
তবে বিপরীতে, ইসরাইল এখনো কঠোর অবস্থানে রয়েছে। তাদের দাবি, যুদ্ধ তখনই শেষ হবে, যখন হামাসকে পুরোপুরি নিরস্ত্র ও বিলুপ্ত করা যাবে। আর এই শর্তের কারণেই যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়ন বিলম্বিত হচ্ছে। হামাসের পক্ষ থেকে অস্ত্র সমর্পণের ব্যাপারে কোনো সম্মতি নেই।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইলি হামলায় গাজায় নিহত হয়েছেন ৫৬,৩৩১ জন, এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ৩২ হাজার ৬৩২ জন ফিলিস্তিনি। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের একটি চমকপ্রদ হামলায় ইসরাইলি ভূখণ্ডে ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এরপর থেকেই ইসরাইল প্রতিশোধ হিসেবে গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে।
এ দীর্ঘমেয়াদী সংঘাতের মধ্যেই গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতির একটি ধাপ কার্যকর হয়েছিল, যা আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় সম্ভব হয়েছিল। তবে, সেই যুদ্ধবিরতি টিকেছিল মাত্র দুই মাস। ১৮ মার্চ থেকে আবারও ইসরাইলের দ্বিতীয় দফা অভিযান শুরু হয়, যাতে আরও ৬ হাজার ৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন এবং আহত হন ২০ হাজার ৫৯১ জন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই ঘোষণায় নতুন করে কূটনৈতিকভাবে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে। যদিও বাস্তবায়ন অনেকটাই নির্ভর করবে ইসরাইলের অবস্থানের উপর, কারণ তারা হামাসকে সম্পূর্ণ নির্মূল করতে চায়—শুধু যুদ্ধবিরতিতে রাজি নয়।
এদিকে বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার সংস্থাগুলো গাজায় চলমান সংঘাত ও বেসামরিক প্রাণহানির বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘও অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের আহ্বান জানিয়েছে।
ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংঘাত নিয়ে এবার ট্রাম্প যে বার্তা দিলেন, তা শুধুমাত্র মধ্যপ্রাচ্য নয়, বরং বৈশ্বিক রাজনীতিতেও নতুন আলোচনার জন্ম দিচ্ছে।