নিউইয়র্কের প্রগ্রেসিভ ডেমোক্র্যাট নেতা ও অ্যাসেম্বলি সদস্য জোয়েরান মামদানি আবারও মার্কিন কংগ্রেসের শক্তিশালী ডেমোক্র্যাটিক নেতা হাকিম জেফ্রিসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, তবে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক সমর্থনের ঘোষণা আসেনি। বিষয়টি ঘিরে নিউইয়র্ক ও জাতীয় পর্যায়ের ডেমোক্র্যাটিক রাজনীতিতে উত্তেজনা ও কৌতূহল বাড়ছে। আফ্রিকান বংশোদ্ভূত এবং কুইন্সের বহুজাতিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করা মামদানি দীর্ঘদিন ধরে প্রগ্রেসিভ রাজনীতির অন্যতম মুখ হিসেবে পরিচিত। তাঁর নীতি, বিশেষ করে আবাসন সংকট সমাধান, অভিবাসী অধিকার রক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় সমতা আনার প্রচেষ্টা নিউইয়র্কের তরুণ ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কিন্তু একইসঙ্গে তিনি ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়ায় ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মূলধারার অনেক নেতা তাঁর বিষয়ে দ্বিধায় রয়েছেন।

27 August 2025 | Pic: Collected
হাকিম জেফ্রিস বর্তমানে মার্কিন কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাটিক নেতার আসনে রয়েছেন এবং ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটি থেকে শুরু করে স্থানীয় রাজনীতিতেও তাঁর প্রভাব বিস্তৃত। নিউইয়র্কের নির্বাচনে কোনো প্রার্থীকে আনুষ্ঠানিক সমর্থন দিলে তাঁর জয়ের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। তাই মামদানির টিম আশাবাদী ছিল যে, বারবার বৈঠকের পর এবার হয়তো জেফ্রিস তাঁর প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন জানাবেন। কিন্তু বৈঠক শেষে স্পষ্ট হয়ে গেছে, জেফ্রিস এখনো তাঁর অবস্থান জানাতে রাজি নন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এর পেছনে দুটি প্রধান কারণ রয়েছে। প্রথমত, ডেমোক্র্যাটিক পার্টি বর্তমানে প্রগ্রেসিভ ও সেন্ট্রিস্ট শাখায় বিভক্ত। মামদানি স্পষ্টতই প্রগ্রেসিভ ঘরানার প্রতিনিধি, যিনি সামাজিক ন্যায়বিচার, অভিবাসন সংস্কার এবং ফিলিস্তিনের পক্ষে খোলাখুলি অবস্থান নিয়েছেন। অপরদিকে, জেফ্রিস মূলত সেন্ট্রিস্ট রাজনীতির পক্ষে এবং তিনি চান না তাঁর সমর্থনের কারণে জাতীয় পর্যায়ে ইসরায়েল বিষয়ক বিতর্ক আরও বাড়ুক। দ্বিতীয়ত, নিউইয়র্ক রাজনীতিতে প্রভাবশালী ইহুদি ভোটব্যাংক আছে, যেখানে মামদানির বক্তব্য অনেক সময় সমালোচিত হয়েছে। ফলে জেফ্রিস হিসাব-নিকাশ করে এগোচ্ছেন।
এই পরিস্থিতি মামদানির জন্য কঠিন হয়ে উঠছে। কারণ, তিনি যে আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সেখানে প্রতিপক্ষও শক্তিশালী। প্রতিদ্বন্দ্বী শিবির ইতিমধ্যেই জেফ্রিসের নীরবতাকে তাদের পক্ষে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করছে। তারা বলছে, প্রগ্রেসিভ রাজনীতি মূলধারার ডেমোক্র্যাটদের আস্থাভাজন হতে পারছে না। তবে মামদানির শিবির দৃঢ়ভাবে বলছে, জনগণের শক্তিই তাঁর সবচেয়ে বড় সমর্থন। তারা মনে করে, আবাসন সমস্যা, স্বাস্থ্যসেবার খরচ এবং শিক্ষা খাতে বৈষম্যের মতো মূল বিষয়গুলোতে মামদানির অবস্থানই তাঁকে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য করেছে।
এদিকে, কুইন্স ও ব্রুকলিনের প্রগ্রেসিভ ভোটাররা এই বৈঠকের ফলাফল গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। অনেকেই মনে করছেন, যদি জেফ্রিস সমর্থন না-ও দেন, তবুও মামদানি তরুণ ও প্রবাসী ভোটারদের শক্তিতে লড়াই চালিয়ে যাবেন। তবে জেফ্রিসের সমর্থন না পাওয়া তাঁর প্রচারণায় আর্থিক অনুদান এবং মিডিয়া কভারেজে ঘাটতি তৈরি করতে পারে।
জাতীয় পর্যায়ে এই বৈঠক ও সমর্থন ঘিরে আলোচনার কারণ হলো—এটি শুধু একটি কংগ্রেসনাল আসনের লড়াই নয়, বরং মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনার প্রতীক। প্রগ্রেসিভরা যদি মামদানির মতো প্রার্থীকে জয়ী করতে পারে, তবে তা আগামী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নীতি ও দিক পরিবর্তনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। অপরদিকে, যদি মূলধারা মামদানিকে ব্যর্থ করে দেয়, তবে প্রগ্রেসিভ শাখার প্রভাব হ্রাস পাবে।
অন্যদিকে, নিউইয়র্কের অভিবাসী সম্প্রদায়ও মামদানির জন্য বড় সহায়ক শক্তি। তাঁরা বিশ্বাস করেন, নিজে একজন অভিবাসীর সন্তান হিসেবে মামদানি তাঁদের সমস্যাগুলো বুঝতে পারবেন এবং কংগ্রেসে তাদের কণ্ঠস্বরকে তুলে ধরবেন। বিশেষ করে দক্ষিণ এশীয়, আরব ও আফ্রিকান-আমেরিকান ভোটারদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা চোখে পড়ার মতো।
সব মিলিয়ে বলা যায়, মামদানি ও জেফ্রিসের বৈঠক রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও এর ফলাফল অনিশ্চিত থেকে গেছে। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির শক্তি-সামঞ্জস্য, আন্তর্জাতিক রাজনীতি, বিশেষ করে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যু এবং নিউইয়র্কের বহুজাতিক ভোটার কাঠামো—সব মিলিয়ে এই সমীকরণ এখনো জটিল। আগামী কয়েক সপ্তাহে জেফ্রিস যদি সমর্থন দেন, তবে তা মামদানির প্রচারণাকে নতুন গতি দেবে। কিন্তু সমর্থন না এলে তাঁর প্রচারণা আরও কঠিন হয়ে উঠবে। তবে যেভাবেই হোক, এই লড়াই যুক্তরাষ্ট্রে প্রগ্রেসিভ রাজনীতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।