সাধারণভাবে স্বাভাবিক মনে হলেও আমাদের মুখগহ্বরে বসবাসরত কিছু ব্যাকটেরিয়া—বিশেষ করে Viridans streptococci—হৃদরোগের ঝুঁকি গড়ে তুলতে পারে, সাম্প্রতিক ফিনিশ গবেষণায় এ ঘটনা স্পষ্ট হয়েছে। গবেষকরা হঠাৎ করে হৃদরোগে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের টিস্যু ও হার্ট সার্জারির মতো চিকিৎসায় অংশ নেওয়া ৯৬ জন রোগীর ধমনী থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেন। এর পরিণতি হল, প্রায় ৬০-শতাংশ নমুনায় Viridans streptococci পাওয়া গেছে, যা সাধারণত মানুষের মুখে অবস্থান করা এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া।

2 September 2025 | Pic: Collected
এই ব্যাকটেরিয়াগুলো যখন ধমনী প্রাচীরে প্রবেশ করে, তখন তারা একটি ঘন প্রতিরক্ষামূলক আবরণ বা বায়োফিল্ম তৈরি করে, যা নিজেকে শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং ওষুধের হাত থেকে রক্ষা করে। কিন্তু যখন সেই বায়োফিল্ম ভেঙে পড়ে, তখন রক্তনালিতে প্রবেশ করা ব্যাকটেরিয়াগুলো প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা ধমনী প্রাচীর দুর্বল করে তোলে এবং রক্ত জমাট বাঁধার আশঙ্কা ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি প্রকটভাবে দেখা দিতে পারে।
এই তথ্য নতুন নয়, বরং বিশ^্বব্যাপী অনুপ্রবণতা—যেখানে মুখের স্বাস্থ্য ও হৃদরোগের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দৃশ্যমান—এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, আর eLife-এ প্রকাশিত এক গবেষণামতে দেখা গেছে, যে ব্যাকটেরিয়া গাঙ্ঘাতিক দাঁতের ক্ষয় এবং মুখের দুর্গন্ধের জন্য দায়ী—যেমন Fusobacterium nucleatum—তারা ধমনীর ক্লগিং ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও বৃদ্ধি করে । অন্যদিকে, ২০১০ সালে ন্যাশনাল সার্ভিসের পর্যালোচনামতে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, মুখে থাকা ব্যাকটেরিয়া ও হৃদরোগের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। তবে এটি সরাসরি কারণ নয়, বরং প্রদাহের মাধ্যমে ধীরে ধীরে ধমনীর ক্ষতি উৎপন্ন করে ।
গবেষণাগুলো থেকে বুঝা যায়, দাঁত এবং গাম—দাঁতের চারপাশের নরমটিস্যু—এর যত্ন না নেওয়া শুধু একটা দন্তজীবন ঝুঁকি নয়, বরং হৃদ্যন্ত্রের সুরক্ষার ক্ষেত্রেও তা গুরুত্বপূর্ন। Columbia University-এর একটি ২০০৫ সালের গবেষণা এ কথা বলেছে যে, দাঁতের ব্যাকটেরিয়া যেমন–periodontal pathogens–ধমনীতে plaque বা জম তৈরিতে সাহায্য করে, যা স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বাড়ায় ।
সাম্প্রতিক সময়ে আরও গবেষণায় দেখা গেছে, ভালো ও নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার রাখা, দু’বার ব্রাশ করা, ফ্লস করা—এসব অভ্যাস হৃদরোগ ঝুঁকি কাটাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে । Harvard-এর এক চিকিৎসক সতর্ক করেছেন, বিছানায় যাওয়ার আগে না ব্রাশ করলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়; গবেষণায় দেখা গেছে যারা দিনে তিন বার ব্রাশ করেন, তাদের হার্ট ফেইলিওর ঝুঁকি ১২% এবং অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন ঝুঁকি ১০% কম । আরো একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মুখ ও অন্ত্র উভয়ের মাইক্রোবায়োমই স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে মুখের মাইক্রোবায়োমের ভারসাম্য হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে ।
সেই সাথে, Porphyromonas gingivalis নামক একটি যুক্ত ব্যাকটেরিয়া—যা পিরিওডেন্টাল ডিজিজের জন্য দায়ী—হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও হৃদযন্ত্রের দ্রুত অসুখের সাথে সম্পর্কিত। আর Streptococcus mutans—যা দাঁতের ক্ষয়ের জন্য খ্যাত—তাও হৃদরোগের সাথে সংশ্লিষ্ট; এটি ধমনীর প্লাক ও হৃদযন্ত্রের অংশে পাওয়া যায় ।
নির্ণয়ে পৌঁছাতে গেলে দেখা যায়, মুখের ব্যাকটেরিয়ার কারণে উদ্ভূত প্রদাহ (systemic inflammation) এবং বায়োফিল্ম ধমনীর স্বাস্থ্যকে সরাসরি হুমকির মুখে ফেলে এবং মৃত্যুর ভয়ংকর রোগ যেমন হার্ট অ্যাক্ট ও স্ট্রোকের ঝুঁকিতে উদ্বুদ্ধ করে। এমন পরিস্থিতিতে দাঁত ও গামের স্বাস্থ্য রক্ষায় আগ্রহী হওয়া শুধু স্বাস্থ্যের জন্য নয়, বরং জীবনের সুরক্ষার জন্যও জরুরি।
তাহলে কী করা উচিত? নিয়মিত দাঁত ব্রাশ ও ফ্লস করা ছাড়াও, অন্তত অর্ধ-বার্ষিক দাঁতের পরীক্ষা ও স্কেলিং করানো উচিত, বিশেষ করে গাম ফোলাওয়া বা রক্তপাত, দুর্গন্ধ, গলা ফুলুনের মতো উপসর্গ দেখা গেলে; দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। যারা ধূমপান করেন বা ডায়াবেটিস আক্রান্ত, তাদের আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত কারণ এসব অবস্থার সঙ্গে মুখের ইনফেকশন ও প্রদাহের ঝুঁকি উভয়ই বাড়ে ।
সামগ্রিকভাবে, ফিনিশ গবেষণার নির্দেশনায় স্পষ্ট হচ্ছে—মুখের স্বাস্থ্য বিব neglect করলে হার্টে বিপদ ডেকে আনতে পারেন। এটি শুধু দন্ত পরিচর্যা নয়, এক সামগ্রিক নিরাপত্তা ও চিকিৎসা সতর্কতার অংশ। দাঁতের স্বাস্থ্য ও হৃদ্যন্ত্রের সুস্থতার সেতুবন্ধ করার অঙ্গ অবশ্যই উচিৎ।